মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জে অসুস্থ রোগী দেখতে যাচ্ছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের একটি পরিবার। মাছ-মাংসসহ কাঁচা পণ্য তখনও গাড়িতে। সবকিছু থাকলেও নেই মাইক্রোবাসের যাত্রীরা। এ যাত্রা-ই যে তাদের শেষ যাত্রা হতে যাচ্ছে তা জানতো না কেউ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে কুষ্টিয়া থেকে একটি মাইক্রোবাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। ঠিক একই সময় অপর দিক থেকে একটি ট্রাক নাটোরের দিকে আসছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া হাটি কুমরুল রোডের তরমুজ পাম্প এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকটি তার লেন অতিক্রম করে মাইক্রোবাসটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চার নারীসহ পাঁচ জন নিহত হন।
আরো জানা যায়, মাইক্রোবাসে থাকা অপর তিনজন গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একজনের মৃত্যু হয়। আর বাকি দু’জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ বিকেল ৩টায় রাজশাহী মেডিকেলে সেই দুই জনেরও মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মাইক্রোবাসে থাকা চালকসহ মোট আটজনই মৃত্যুবরণ করেন।
নিহতরা হলেন— জাহিদুল ইসলাম,তার স্ত্রী শেলি, শেলির বোন আঞ্জুমান আরা, তার বোন আন্নি,খালা লিমা, আনু বেগম, সীমা খাতুন ও চালক শাহাবুদ্দিন।
বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. ইসমাইল কাটোয়া সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সকালের ট্রাক ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের সব যাত্রী নিহত হয়েছেন। চালকসহ নিহতের সংখ্যা আটজন। নিহত ৬ জনের মরদেহ বনপাড়া হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। নিহতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তারা থানায় আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্ত থেকে মনে হচ্ছে ট্রাকটি রং-সাইডে চলার চেষ্টা করছিল। ট্রাকটি নিজের লেনে থাকলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’
স্থানীয়রা জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা পাঁচজনকে মৃত পেয়েছেন। তারা জানান, গাড়ির ভেতরেই মারা যান ওই যাত্রীরা। এরপর এলাকাবাসীরা কয়েকজন মিলে মরদেহ গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনেন বলেও জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, দুইটি গাড়ি-ই ওভার স্পিডে থাকার কারণেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা পুলিশ সুপার, হাইওয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস, ট্রাক এবং মরদেহগুলো নেয়া হয় বনপাড়া হাইওয়ে থানায়। পুলিশ বলছে, ট্রাকটি উল্টোপথে আসার পাশাপাশি বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার কারণ।
বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত। মহাসড়কটি কম প্রশস্ত হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত গাড়ির কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। মহাসড়কটি প্রশস্ত করা হলে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে আসবে— এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের।