বরেন্দ্র জনপদ নওগাঁ জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার মাঠগুলো ছেয়ে গেছে সবুজে। জমি ইজারা নিয়ে চাষিরা গড়ে তুলেছেন আম বাগান।
লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রতিবছরই বাড়ছে বাগানের পরিমাণ। তবে, গাছের বয়স হওয়ায় কমেছে আমের উৎপাদন। আর বাড়তি লাভের আশায় এসব গাছে হরমোন ব্যবহার করছেন চাষিরা। এতে সাময়িক লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিতে পড়ছে গাছ।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আম চাষি আবু সাঈদ। নয় বছর আগে নিজের ২০ বিঘা জমিতে আম চাষ শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে ১২ থেকে ১৫ বছরের জন্য জমি ইজারা নিয়ে বর্তমানে তার বাগানের পরিমাণ ১২০ বিঘা। তবে, ফলন কম হওয়ায় গাছে হরমোন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
আবু সাইদ জানান, ফলন কমে যাওয়ার কারণে গতবছর থেকে তিনি গাছে হরমোন ব্যবহার করা শুরু করেছেন। এতে করে ফলন আগের চেয়ে দ্বিগুণ হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমি বছরে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ইজারা নিতে হয়। আম উৎপাদনে বছরে খরচ পড়ে অন্তত ৩৫-৪০ হাজার টাকা। ৭ থেকে ৮ বছরের বেশি বয়সী গাছে আমের উৎপাদন কম হলে হরমোন ব্যবহারে বাধ্য হন চাষিরা। এতে প্রতি গাছে ৫০ টাকার হরমোনে অন্তত এক হাজার টাকার বেশি আম পাওয়া যায় বলে জানান তারা।
কৃষকরা জানান,হরমোন ব্যবহার করা হয় যাতে ফসল বেশি হয়। বিঘা প্রতি যে টাকা লাগে সে তুলনায় ফলন না হলে কৃষকদের লস। তাই হরমোন ব্যবহার করা হয় বেশি ফলনের আশায়। এ বছর আমের উৎপাদন এবং দামও কম।
তবে, কৃষি বিভাগ বলছে, গাছে হরমোন ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন ব্যহত হয়। এছাড়া মানব শরীরেও এর প্রভাব পড়ে। তাই অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করতে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে তারা ফলন বেশি পাবার আশায় হরমোন ব্যবহার করেন কিন্তু এটার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে যা পরবর্তী ফলনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। আমরা আম চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি হরমোন, কীটনাশক বা বালাইনাশক ইত্যাদি যেন জুডিশিয়ারি ব্যবহার করে।’
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বাণিজ্য হবে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।