রাঙামাটিতে বিকেএসপির প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন না করেই ফিরে গেছে কমিটি, স্থানীয়দের ক্ষোভ

বিকেএসপির প্রস্তাবিত জমি
এখন জনপদে
1

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে জমির প্রস্তাবও দিয়েছেন স্থানীয়রা। জমির সঠিকতা যাচাইয়ে আজ (সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন পরিদর্শনে গেছেন এ সংক্রান্ত গঠিত তিন সদস্যের কমিটি।

তবে রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই ও কাউখালী উপজেলায় কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করলেও প্রস্তাবনার সবচেয়ে উপযোগী জায়গাটি না দেখেই ফিরে গেছেন তারা। সরকারি চিঠি আর অনুরোধ করেও প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন না করায় স্থানীয়দের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। তারা এমন আচরণকে চরম বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘কাউখালীর কচুখালী মৌজার হেডম্যান চিংকিউ রোয়াজার প্রস্তাবিত জমিটিরও তদন্তসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কাবিরুল ইসলাম খান গেল ২৬ আগস্ট এক অফিস আদেশ জারি করেন। এতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে প্রস্তাবিত জমির সঠিকতা যাচাইয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিকে সরেজমিন পরিদর্শনসহ সাত কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়টির সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এ কমিটিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সগীর হোসেনকে সভাপতি এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ও উপপরিচালক মো. আওলাদ হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে।

তবে সোমবার কাউখালীতে অন্য দুয়েকটি স্পট দেখলেও সবচেয়ে উপযোগী এবং উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরত্বে কচুখালী হেডম্যান পাড়ায় প্রস্তাবিত ৫০ একরের জমিটি পরিদর্শনে যাননি। এমনি বার বার অনুরোধ করেও প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন না করায় তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন হেডম্যান সহকারী বিপন চাকমা, প্রবীণ শিক্ষক অমরেন্দ্র রোয়াজা, ফরিদ আহাম্মদসহ স্থানীয় বাসিন্দা অনেকে। তারা এমন আচরণকে চরম বৈষম্যমূলক বলে জানিয়েছেন। অথচ জমিটি পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক চিঠি দিয়েছেন।

তবে মন্ত্রণালয় থেকে কেবল পাঁচটি জায়গা পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে পরবর্তীতে নির্দেশনা দেয়া হলে আবার পরিদর্শন করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।

এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আউয়ালীন খালেক বলেন, ‘অনেকগুলো আবেদন পড়েছে। কিন্তু সবগুলো একদিনে পরিদর্শন করা সম্ভব না। সোমবার প্রাথমিকভাবে রাঙামাটি সদর, কাপ্তাই আর কাউখালীর পূর্ব নির্ধারিত জমি পরিদর্শন করেছেন কমিটির সদস্যরা। পরবর্তীতে আবেদন করা অন্য জমিগুলোও পরিদর্শন করবেন।’

২৬ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বরাবর দেয়া এক আবেদনে রাঙামাটিতে বিকেএসপির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য কাউখালী উপজেলা সদরের ৯৮ নম্বর কচুখালী মৌজায় দান হিসাবে এক একরসহ ৪৯ একর পাঁচ শতক জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা দেন মৌজার হেডম্যান (মৌজ প্রধান) চিংকিউ রোয়াজা।

প্রস্তাবিত এ জমির অবস্থান কাউখালী উপজেলা কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশে কেবল ৩০০ গজ দূরত্বে হেডম্যান পাড়াসংলগ্ন। এটি সমতল ও নিচু পাহাড় ভূমি, যা বিকেএসপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনা নির্মাণ করলে কোনো রকম পাহাড় কাটার প্রয়োজন হবে না। কেউ এতে উচ্ছেদ বা উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কাও নেই।

আরও পড়ুন:

কাউখালী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা অর্জুমনি চাকমা বলেন, ‘প্রস্তাবিত ওই জায়গায় বিকেএসপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি করলে যেকোনো স্থাপনা, ভবন নির্মাণে কোনোরকম পাহাড় কাটা লাগবে না। পর্যাপ্ত সমতল মাঠ আছে সেখানে।’

কচুখালী মৌজার হেডম্যান সহকারী বিপন চাকমা বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত জায়গায় বিকেএসপি স্থাপনা নির্মাণ করা হলে কেউ উদ্বাস্তু হবেন না।’

কাউখালীর সুইহলামং ফুটবল অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক সুইহলামং মারমা বলেন, ‘ওখানে পর্যাপ্ত জমি আছে। সেখানে বিকেএসপির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করলে তিন পার্বত্য জেলার মানুষ সবাই সমানভাবে উপকৃত হতে পারবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘কাউখালীতে প্রস্তাবিত ওই জমিতে বিকেএসপি স্থাপনা করলে এলাকাবাসী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’

এর আগে ২১ আগস্ট রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন খন্দকার স্বাক্ষরিত কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কাউখালীতে বিকেএসপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৯৮ নম্বর কচুখালী মৌজার হেডম্যান চিংকিউ রোয়াজা তার নিজ নামীয় জমি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দান হিসাবে এতে বিকেএসপিকে এক একর জমি দেয়ার প্রস্তাবনাও উল্লেখ আছে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাঙামাটিতে বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে উপযুক্ত জমির সঠিকতা যাচাই চলছে। কাউখালীতে কচুখালী মৌজার হেডম্যান চিংকিউ রোয়াজার প্রস্তাবিত জমিটিরও তদন্তসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এসএস