সবুজ পাতার ফাঁকে, গাছের ডালে বসেছে পাখিদের রাজসভায়। একটি দুটি নয়, কমপক্ষে বিশটি গাছে বাসা বেঁধে গড়ে উঠেছে পাখির রাজ্য। লম্বা পা আর শামুক ভাঙার জন্য বিশেষ ঠোঁটওয়ালা শামুকখোল পাখি ২০১৭ সালে বগুড়ার উপজেলা প্রশাসনের ঘোষণায় ‘পাখির রাজ্য’ স্বীকৃতিও পায়।
২০১২ সালে প্রথমবার কিছু পাখি এসে বাসা বাঁধে গ্রামের একটি বটগাছে। শুরুতে পাখির চেঁচামেচি আর বিষ্ঠায় বিরক্ত হলেও ধীরে ধীরে তাদের প্রেমে পড়ে যায় এলাকাবাসী। শিকারি এলে প্রতিরোধ করে গড়ে তোলেন পাখির অভয়াশ্রম। জোড়ায় জোড়ায় থাকে তাই মানিকজোড় হিসেবে পরিচিত এই পাখির ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছে সারা গ্রামে। প্রায় পাঁচ হাজার শামুকখোল পাখি রয়েছে বিহার গ্রামে।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এত সম্পর্ক হয়ে গেছে যে, আমরা কাউকে পাখি মারতেও দিই না। বাইরে থেকে লোকজন আসে পাখি মারার জন্য, ধরার জন্য, আমরা দিই না।’
অন্য একজন বলেন, ‘এখন এলাকার লোকজন এত সচেতন হয়ে গেছে যে, পাকি পড়ে থাকলেও কেউ হাত দেয় না এখন।’
আরও পড়ুন:
শামুকখোলের আগমনের পর থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। পাখি শিকার না করা, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সচেতন করেন স্থানীয়দের। এক পর্যায়ে পাখি রক্ষায় ভূমিকা রাখেন গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এখানে তারা মূলত বাচ্চা ফুটানোর জন্য আসে। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্য আসে। তাদের রক্ষার প্রচেষ্টায় তারা যে আমাদের এ এলাকাটাকে বেছে নিয়েছে, এটার জন্য আমরা খুশি।’
অতিথি পাখির সাথে মিশে থাকলেও শামুকখোল দেশিয় পাখি, তবে যাযাবর শ্রেণির। মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে থাকে, শীতে খাবারের সন্ধানে বাসা বাঁধে বিল অঞ্চলে। বছরের বেশি সময় এখানে থাকে পাখি, তাই নিয়মিত খোঁজ রাখা হয় বলে জানান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:
বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান বলেন, ‘এরা যেহেতু লোকাল মাইগ্রেটরি পাখি। মাইগ্রেটরি পাখি হচ্ছে যাযাবর পাখি, ওরা যাযাবরের মতো ঘুরবে। কোথাও তাকে স্থির রাখা যাবে না। সুতরাং এ মুহূর্তে আমরা যেটা মনে করি, বিহারে যেটা আছে সেটা অনিরাপদ না। তবে এ বিষয়টা আমর আবার দেখবো।’
এক যুগের বেশি সময় ধরে শামুকখোল পাখির সাথে সখ্যতা এখানকার মানুষের। বছরে যে তিন থেকে চার মাস গাছে পাখি থাকে না, সে সময় বিচ্ছেদের সুর বাজে গ্রামবাসীর মনে।