প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারাচ্ছে ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা। আতঙ্ক বিরাজ করছে নদীপাড়ের হাজারও বাসিন্দাদের।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামের কুটি বেগম। পরের জমিতে বর্গা চাষ করে সংসার চালান তার স্বামী। তিন সন্তান নিয়ে মধুমতী পাড়ের আমডাঙ্গা গ্রামে সুখেই কাটছিল তাদের দিন। সম্প্রতি তিন সন্তান নিয়ে রাতে যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় কুটি বেগমের বসতঘর। সন্তানদের নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পরের বাড়িতে।
কুটি বেগম বলেন, ‘ভাবিনি যে এত ভাঙবে, আরও অনেক ভেতরে ঘর ছিলো। রাত আড়াইটার দিকে ভাঙছে। ঘুমের মধ্যে শুনছি পানির শব্দ। উঠে দেখি অর্ধেক ভেঙে চলে গেছে।’
আরও পড়ুন:
কেবল কুটি বেগম নয়, প্রতিবছরই এ এলাকার মানুষকে ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। গেল এক মাসের ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেছে ইতনা, শালনগর, লাহুড়িয়া, কোটাকোল, মল্লিকপুর ইউনিয়নের পনেরোটি গ্রামের হাজারও পরিবারের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। শুধু আমডাঙ্গা গ্রামেরই দেড় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা গিলে খেয়েছে মধুমতী। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে জনপদের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘তিনটা ঘর ছিল। সব নদীর পানিতে চলে গেলো। এবছর আমাদের গ্রাম এমনভাবে ভাঙছে, যেখানে ভাঙছে সেখানে ১০ থেকে ১২ ঘর একসঙ্গে ভাঙতেছে।’
জেলার আশি কিলোমিটার এলাকায় মধুমতীর ১৩ কিলোমিটার অংশ রয়েছে ঝুঁকিতে। এসব এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অনুমোদন সাপেক্ষে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার শাহা বলেন, ‘আমডাঙ্গার ভাঙনে যে স্কুল, কলেজ, বাজার আছে। সেখানে ভাঙন রক্ষার জন্য আমরা অলরেডি অস্থায়ী ইমার্জেন্সি দুইটা প্যাকেজ কাজ শুরু করেছি বালুর বস্তা ফেলে।’
কয়েক যুগ ধরে নদী ভাঙনের এই ধারা অব্যাহত থাকলেও তা প্রতিরোধে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভাঙন রোধে তাই দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।