রেমা–কালেঙ্গা বনাঞ্চল উজাড়; অবৈধ গাছ পাচারে বিপর্যস্ত বন

হবিগঞ্জ
বনাঞ্চল থেকে গাছ পাচার করা হচ্ছে
এখন জনপদে
0

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল হবিগঞ্জের রেমা–কালেঙ্গা থেকে উজার হয়ে যাচ্ছে গাছ। বছরের পর বছর ধরে চলা অবৈধ পাচারে পুরো অভয়ারণ্য নিশ্চিহ্নের পথে। বনের গভীরে এখন আর খুব একটা দেখা মেলে না বড় আকৃতির মূল্যবান গাছের। সম্প্রতি বনদস্যুরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বন বিভাগ বলছে, সংগঠিত সিন্ডিকেট ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরেই রেমা–কালেঙ্গায় গাছ পাচার চলছে। দস্যুদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় বনরক্ষীদের নিরাপত্তাও রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা–কালেঙ্গা। গত ১১ ডিসেম্বর গভীর রাতে কালেঙ্গা বিটের নিশ্চিন্তপুর পাহাড়ে সেগুন গাছ কাটছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বনরক্ষীরা বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে বন্দুকযুদ্ধ।

প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের সশস্ত্র চোরাকারবারির আক্রমণের মুখে একপর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় বনরক্ষীরা। পরে খবর পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

কালেঙ্গা বিট কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, ‘সেখানে তারা গুলি করে আমরাও গুলি করি ঘটনায়। তখন আমাদের জনবল কম ছিলো। এরপরে আমরা পিছু হেটতে বাধ্য হই। তারা কিছু গাছ চুরি করে নিয়ে যায়।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে রয়েছে ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা ও লতাগুল্ম। এখানে বিরল প্রজাতির ও বড় আকারের গাছেরও দেখা মিলত একসময়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অবাধে গাছ কাটায় বন আজ মারাত্মক হুমকিতে।

আরও পড়ুন:

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে মূল্যবান গাছ নিধন করছে। আর এসব পাচারে মদদ দিচ্ছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা। এমনকি বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গাছ পাচারে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, দশ বছর আগে যে গাছ ছিলো বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে। কিছুদিনের ব্যবধানেই তারা অনুধাবন করেছেন বন থেকে অনেক গাছ কমে গেছে।

বনভূমির গাছ পাচারে অন্যতম বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে উপজেলার আমতলা গ্রামের সুমন মিয়া। তার বিরুদ্ধে গাছ পাচারের পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্র আইনে রয়েছে অন্তত সাতটি মামলা। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গাছ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। বন বিভাগ জানায়, প্রায়ই দস্যুরা বন কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বনরক্ষীরা।

হবিগঞ্জ রেমা–কালেঙ্গা ডেপুটি রেঞ্জার আব্দুল হাদী বলেন, ‘আমরা এ গাছ পাচারকারীদের সঙ্গে পারি না। চাকরি করার উদ্দেশে আমরা এসেছি অনেক কিছুই সহ্য করে নিতে হয়।’

হবিগঞ্জ সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা থানায় বলেছি তারা তৎপর আছেন। একজন আসামীকে আটক করা হয়েছে।অবৈধ অস্ত্রগুলো যত তাড়াতাড়ি উদ্ধার করা যাবে ততো সবার জন্য মঙ্গল হবে।’

১ হাজার ৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এ বনভূমি সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক বন। কিন্তু অব্যাহত গাছ পাচারের ফলে ধ্বংসের মুখে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রেমা–কালেঙ্গা বনভূমি উজাড় হতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

এফএস