গণঅভ্যুত্থানে বাকৃবিতে হামলা: ১৫৪ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর শাস্তি

ময়মনসিংহ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা , ক্যাম্পাস
এখন জনপদে
2

২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সারা দেশের মতো উত্তাল ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাস। ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা নেমে আসে রাস্তায়। যোগ দেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী শিক্ষকরাও। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো ক্যাম্পাস। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের এক দফার আন্দোলনে বারবার অবরোধ করা হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নানাভাবে বাধা দেয় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিজয়ের আগের দিন ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার পক্ষে ক্যাম্পাসে ‘শান্তি মিছিল’ বের করে আন্দোলনকারী নিরীহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

২০২৪ এ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৪জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীকে শাস্তির সুপারিশ এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার, অপসারণ ও সনদ বাতিলের শাস্তি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর মধ্যে ১৮জন শিক্ষককে বহিষ্কার ও অপসারণ, ১০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার ও ৪২ শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ শিক্ষক, ২৪ কর্মকর্তা ও ২১ জন কর্মচারীকে শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত গণতদন্ত কমিটি। কমিটির সুপারিশে ৭ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিল করেছে সিন্ডিকেট।

শিক্ষকদের মধ্যে ৬ জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, ৮ জনকে নিম্নপদে অবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের মধ্যে ৮ জনকে বহিষ্কার, ৮ জনকে অপসারণ, ৭ জনকে তিরস্কার এবং ১ জনকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং কর্মচারীদের মধ্যে ২জনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে তিরস্কারের প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া কমিটির সুপারিশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭জনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।

এদিকে ২০২২ সালে ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকাল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে চারজন শিক্ষার্থীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগে ১৮ জনকে শিক্ষার্থী, ২জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীকে শাস্তি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদের মধ্যে ৩ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ১৫ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এছাড়াও ১ জন শিক্ষককে নিম্নপদে অবনমন, ১জনকে বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং ১ জন কর্মকর্তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাকৃবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে “শান্তি মিছিল” নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল আয়োজন করে। মিছিলে উসকানিমূলক ও সহিংস স্লোগান দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার পক্ষে প্রচারণা চালায়। এ সময় নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘তদন্ত কমিটি বিভিন্ন আলোচনা, সাক্ষাৎকার, তথ্যের ভিত্তিতে শাস্তি সুপারিশ করেছে এবং সেগুলোকে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

গত ১৮ মে সিন্ডিকেট সভায় এ শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ৩ জন শিক্ষক তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করায় সিদ্ধান্ত প্রদানে বিল্ম হয়। গতকাল রোববার রিট খারিজ হওয়ায় তাদের শাস্তি সংক্রান্ত কাগজ বিলি শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘঠিত সকল প্রকার দুর্নীতি, জুলুম-নির্যাতন এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বিষয় তদন্ত করার জন্য কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমানকে প্রধান করে ২৬ সদস্যের গণতদন্ত কমিশন গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এএইচ