আজ (মঙ্গলবার, ২২ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে জেলা শহরের গোয়ালচামটস্থ পৌর বাস টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স (১০৫৫) শ্রমিক ইউনিয়ন অবৈধভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ আনে এবং কমিটি বাতিলের দাবিতে সকল শ্রমিকের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে অপরপক্ষের দাবিকৃত নির্বাচিত সভাপতি ইয়াছিন মোল্যার (৪০) নেতৃত্বে অর্ধশত লোক লাঠিসোটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তাদের ব্যানারও কেড়ে নেয়া হয় এবং এলোপাতাড়িভাবে শ্রমিকদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলাকারীরা মানববন্ধনে থাকা শ্রমিকদের আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে স্লোগানও দেয়।
এ ঘটনার পর সাধারণ শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে দুপুর ১২টা থেকে সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং তারাও লাঠিসোটা নিয়ে বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন। পরে দুপুর ২ টার দিকে দুইপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে রূপ নেয় বাস টার্মিনাল। এ সময় ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করা হয়। আহত হন অন্ততপক্ষে ১০ জন শ্রমিক। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে বিরোধ চলে আসছে। এক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ করেন বর্তমান সভাপতি (বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) ইয়াসিন মোল্লা ও অপর গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন লাভলু।
সাধারণ শ্রমিক ও সংগঠনটির সাবেক একাধিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নটিতে ৭ হাজার ২০০ জন সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে এক হাজার দুইজন শ্রমিককে সদস্য দেখিয়ে একপাক্ষিকভাবে ২৫ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ না থাকায় গত ১৭ জুলাই সকলকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার।
ইসমাইল হোসেন লাভলু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকদের না জানিয়ে গোপনে নির্বাচন করা হয়। কোনো তফসিল ঘোষণা না করে এবং ভোটার তালিকা না টাঙিয়েই অবৈধভাবে নির্বাচন দেখিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নটি দখল করা হয়। যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হলে সেখানেও ইয়াছিন মোল্যার নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর সাধারণ শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। আমরা সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের দাবি জানাই এবং শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার চাই। যতক্ষণ সু্ষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস না পাব ততক্ষণ শ্রমিকরা বাস চালাবে না।’
অপরদিকে ইয়াছিন মোল্যা মানববন্ধনকারীদের আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে বলেন, ‘এ আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও চাঁদাবাজি করতেছে। আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এ নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করতে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আজ আওয়ামী লীগের দোসররা একত্রিত হয়েছিল, তখন আমরা সাধারণ শ্রমিকরা বাধা দিয়েছি।’
এদিকে শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে বাস চলাচল বন্ধ করায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রীদের ফিরে যেতে দেখা যায়। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শ্রমিকদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের উত্তেজনা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
তবে ওসি বাস চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানালেও সরেজমিনে সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকতে দেখা যায়।