জেটি ও বহির্নোঙরে জাহাজে চুরি, ডাকাতি ও জলদস্যুতা ঠেকাতে দীর্ঘদিন বন্দর কর্তৃপক্ষ সেল থেকে নিবন্ধিত ওয়াচম্যান নিয়োগ দিতে শিপিং এজেন্টদের চিঠি দিয়ে আসছে। জেটিতে এই নির্দেশনা কার্যকর হলেও বহির্নোঙরে সীমিত সংখ্যক জাহাজ ওয়াচম্যান নিয়োগ দেয়।
খরচ বেশি হওয়ায় বন্দরের সেল থেকে ওয়াচম্যান নেয় না শিপিং এজেন্টরা। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্দরের ওয়াচম্যান সেলের নিবন্ধিত ওয়াচম্যান ও প্রত্যয়নপত্র না নিলে কোনো জাহাজ বন্দর ত্যাগের অনাপত্তিপত্র পাবে না বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে ওয়াচম্যানদের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ১ হাজার ও খাবার ভাতা ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এটি বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে শিপিং এজেন্টরা জানান, জাহাজে বহিরাগত লোক থাকাকে অনিরাপদ মনে করায় অনেক ক্যাপ্টেন ওয়াচম্যান নেয় না। আইএমও'র বিধান অনুযায়ী সিকিউরিটি লেভেল –ওয়ান মানের বন্দরে ওয়াচম্যান নিয়োগ বাধ্যতামূলক নয় ।
তাদের অভিযোগ, বন্দরের নিবন্ধিত ওয়াচম্যানরা কোনো নিরাপত্তা সংস্থার নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। অথচ বেতন তিনগুণ বেশি। এক্ষেত্রে বন্দরের নিবন্ধিত ওয়াচম্যান নিতে বুকিং সেল থেকে বাধ্যতামূলক প্রত্যয়নপত্র নেয়া তাদের জিম্মি করার শামিল। এতে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে, শিপিং কোম্পানিগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে।
সেফ শিপিং লাইনসের ম্যানেজার অপারেশন আনোয়ার জাভেদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে জাহাজগুলো আগমন হয় সেখানে আমাদের এবং বন্দরের ওয়াচম্যানের ব্যবধান হচ্ছে প্রথমত খরচ অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত তাদের আসা যাওয়া, খাওয়া, থাকার ব্যবস্থা সবকিছু আমাদেরকেই করতে হবে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আল্টিমেটলি এটা আমার ইমেজ সেক্টর। আমরা তো লাইসেন্সধারী। কোর্টের সঙ্গে এনলিস্টেড, কাস্টমারের সঙ্গে এনলিস্টেড। আমাদের তো জিম্মি করার কিছু নেই।’
আরও পড়ুন:
বহির্নোঙরে জাহাজে ওয়াচম্যান সরবরাহকারী সংগঠন বলছে, আদালতের রায় উপেক্ষা করে পেশাদারদের বাদ দিয়ে বন্দর বাইরের লোকদের ওয়াচম্যান সেলে নিবন্ধন করেছে যা অবৈধ।
চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, ‘মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করে বেতন দিতে হবে। আর এখন যা করছে তা ব্যবসার জন্য করছে। এটা বৈধ করতে হলে প্রথমত আমাদের বুকিং দিতে হবে।’
এক্ষেত্রে ওয়াচম্যান নিয়োগ বাধ্যতামূলক করলে সেটি গেজেট হিসেবে প্রকাশ এবং বন্দরের ট্যারিফ কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তের দাবি শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের। সুষ্ঠু সমাধান না হলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেন তারা।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘সরকার যদি মনে জাহাজের পাহারা দেয়ার জন্য কোনো নতুন সংস্থা করে দিলে তাহলে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। রচকে ইনভলব করা মানে আমাদের প্রোডাক্টের ওপর পড়বে, দেশের ওপর পড়বে।’
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আইএসপিএস কোড বা কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নে চুরি, ডাকাতি রোধে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে জাহাজে প্রশিক্ষিত ওয়াচম্যান নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে ওয়াচম্যানদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের সমস্ত সমুদ্রবন্দরের জন্য যত ওয়াচম্যান আছে তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা অন্যান্য সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্যও কার্যকরী। ওয়াচম্যান রাখার বিষয়টা আইএসপিএস কোর অনুযায়ী আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টা আমাদের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে দিজি শিপিংয়ের যে নূন্যতম ওয়েজটা দেয়া হয়েছে সেটা অনুযায়ী যদি সবাই করে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপদ থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপদ থাকলে আমাদের ব্যবসায়ীরা নিরাপদ থাকবে।’
একেকটি জাহাজে গড়ে চার থেকে ছয় জন ওয়াচম্যান লাগে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়াচম্যান সেলে প্রায় সাড়ে ছয় শ’ ও মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতির অধীনে প্রায় ছয় শ’ ওয়াচম্যান কাজ করে।