ইসলামী ব্যাংকে লুটেরাদের পালানোর পরও শকুনের নজর: মালিকানা ফেরত না পাওয়ার ক্ষোভ

ইসলামি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে শেয়ার হোল্ডারদের মানব বন্ধন
ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
1

দেশের ব্যাংক খাতের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শারীয়াহভিত্তিক এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ব্যাংকটি বাংলাদেশের বেস্ট ব্যাংক, বেস্ট ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেকবার অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। ব্যাংকটির এই সাফল্যে কুনজর পড়ে একটি গোষ্ঠীর। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের হস্তক্ষেপে ব্যাংকটি ছিনিয়ে নেয় লুটেরা গোষ্ঠী এস আলম। তাদের সীমাহীন লুটপাটে দুর্বল হয়ে পড়ে ব্যাংকটি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়ে যায় ব্যাংক লুটেরাও। তবে এখনও পূর্বের মালিকদের হাতে আসেনি ব্যাংকটি। বরং উল্টো মুক্ত ব্যাংকটিতে নয়া শকুনের উঁকিঝুঁকি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম শারীয়াহ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ব্যাংকটি ছিনিয়ে নেয় এস আলম গ্রুপ। জুলাই ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে লুটেরা গোষ্ঠী পালিয়ে গেলেও এখনও স্থিতিশীলতা ফেরেনি ব্যাংকটিতে।

এরইমধ্যে ইসলামী ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিচার চেয়ে কয়েক দফা রাস্তায় নামে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ও গ্রাহকরা। ১১ আগস্ট এক প্রতিবাদ সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হন ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।

গেল বছরের ২২ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গঠন হয় পাঁচ সদস্যের নতুন পর্ষদ। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নানা অভিযোগ থাকার পরেও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ফের তার বিরুদ্ধে এস আলমের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠে। বিএফআইইউ তলব করে মাসুদসহ তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব। অবশেষে ১৭ জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি।

এরপর ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক ড. জোবায়দুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে শেয়ার হোল্ডার, ব্যাংকারসহ আমাতকারীদের রয়েছে অসন্তোষ। তাদের দাবি, ইসলামী ব্যাংকের মতো শারীয়াহ ব্যাংক পরিচালনায় অভিজ্ঞতা নেই তার।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শেয়ার হোল্ডার ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘কোন ব্যাংক সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সঠিক বোর্ড দরকার। আর আমরা গ্রাহক হিসাবে মনে করি না জোবায়েদুর রহমান স্যারের ইসলামি ব্যাংক পরিচালনার মতো অভিজ্ঞতা আছে বলে আমার জানা নেই।’

৯ জুলাই জোবায়েদুর রহমানকে অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে ফের সংকটের শঙ্কা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে যারা ছিলেন আর যারা ব্যাংক চালনায় এতদিন তাদের সততার পরিচয় দিয়েছে সে ভালো মানুষগুলোর কাছে আবারও ইসলামি ব্যাংক ফিরে যাবে। আবারও প্রথম হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালিকানা বেদখল হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকটির আর্থিক সূচকগুলোতে অবনতি হয়। এমন অবস্থায় ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়াতে অভিজ্ঞ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন।

অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংক যে ভাবধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, যেভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিলো আবারও তাদের হাতেই ফেরত দেয়া উচিত। বর্তমান পর্ষদ বা যেভাবে তাদের সেট করা হচ্ছে তাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। আবারও যদি একইরকম লোক দিয়ে করা হয় তাহলে হয়তো তারা নিজেরাই বিদ্রোহ করতে পারে যে আমরা এরকম প্রশাসন চাই না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নতুন চেয়ারম্যানের হাত ধরে এগিয়ে যাবে ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ইসলামি ব্যাংক সম্পর্কে তার সম্মুখ ধারণা আছে। তার প্রফেশনাল প্রোফাইল খুবই সমৃদ্ধ। আমরা কিছুদিন দেখি, তারপর রিভিউ করে বুঝবো উনি ভালো করে নাকি খারাপ করে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত, ব্যাংকটি বর্তমানে খেলাপি রয়েছে ৪৭ হাজার ৬ শ’ ১৮ কোটি টাকা।

ইএ