টাকার মান কমায় চাপ বাড়ছে আমদানিতে

মুদ্রাবাজার
অর্থনীতি
0

দেড় বছরে ৮৬ টাকার ডলার বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। এভাবে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানিতে লাগছে বেশি ডলার।

আবার ব্যাংকে ডলারের যোগান কম থাকায় ১১০ টাকায় খোলা যাচ্ছে না ঋণপত্র। লাগছে ১২০ থেকে ১২২ টাকা।

দেশের অনেক ব্যবসায়ী সংগঠন বলছে- এই বাড়তি খরচা হচ্ছে, যার ধকল সামলাতে অনানুষ্ঠানিক নানা কৌশল নিচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ী। শীর্ষ বণিক সংগঠন এফবিসিসিআই'র দাবি- অনানুষ্ঠানিকভাবে দেশে টাকার মূল্য কমেছে অন্তত ৪০ টাকা।

ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানির যে অর্থ আসে তা যোগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে ইপিবি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, শিপমেন্ট, ছাড়সহ হিসাব সংরক্ষণ করে নিজেদের হিসাব প্রকাশ করে।

তবে দুটো সংস্থার রপ্তানি আয় সমান হবার কথা থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির ১২ বিলিয়ন ডলার ও সেবা রপ্তানির ৯ কোটি ডলার আসেনি দেশে। অথচ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪৮ কোটি ডলার। একই সময়ের হিসাবে এনবিআর বলছে, রপ্তানি কমেছে ২৫৩ কোটি ডলার, আর তাতে ৩০২ কোটি ডলার আয় যোগ হয়নি গেল বছরের রপ্তানি আয়ে। রাষ্ট্রের তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকি খুঁজতে ত্রিপক্ষীয় কমিটি তদন্ত শুরু করেছে।

রপ্তানি আয়ের সাথে জড়িত আন্তর্জাতিক ডলার মূল্য বা টাকার মান। এলসি খোলার জন্য প্রয়োজন হয় বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু গত দেড় বছরে প্রতি মাসেই কয়েক দফায় নির্ধারিত হয় একক বিনিময় হার।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিলো ৮৫-৮৬ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে কাগজে-কলমে একই রেট থাকলেও খোলাবাজারের হাতে চলে যায় ডলারের রেট। ১৭ মে থেকে নিয়ন্ত্রিত রেট থেকে বাড়তে থাকে ডলারের দাম। ২০২৩ এর শুরুতে ডলার কেনাবেচায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে একক মুদ্রার কেনাবেচার দর ওঠে ১০২ ও ১০৭ টাকা। এই মুহূর্তে কাগজে-কলমে ১১০ টাকা থাকলেও ১২০-২২ টাকায় ঋণপত্র খুলছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এতে ১০-১২ টাকার খরচ সামলাতে শঙ্কা বাড়ছে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘যারা পণ্য আমদানি করছে, ধরুন তারা আজকে বুকিং দিলো ১১৩ টাকায় কিন্তু তারা যখন পণ্যটা দেশে আসবে তখন রেট হয়ে গেল ১৩০ টাকা। অর্থাৎ একদিকে টাকার অবমূল্যায়ন; অন্যদিকে ভ্যাট-ট্যাক্স, সব মিলে তাদের ১৫ শতাংশ লোকসান হয়ে যাচ্ছে। টাকাটা কিন্তু পেমেন্ট হচ্ছে যখন তারা পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে তখন।’

গত দেড় বছর ব্যাংক মালিকরা ডলারের দর ঠিক করলেও নিজেরাই মানতে নারাজ ব্যাংকগুলো। ফলে লোকসান সামাল দিতে বাড়ছে অর্থপাচার; অন্যদিকে রপ্তানিতেও ঘাটতি যোগ হচ্ছে। এফবিসিসিআই বলছে, আনুষ্ঠানিক যাই হোক না কেনো, বিশ্ববাজারে এই মুহূর্তে ৪০ টাকা নেমেছে টাকার মূল্য। যা বৃহৎ স্বার্থেই স্থির হওয়া প্রয়োজন।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘কাগজে-কলমে ডলার রেট ১১০ টাকা, কিন্তু যখন পণ্য আমদানি করা হয় তখন ১২০ থেকে ১২৩ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য সরকারকে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এরমধ্যে যারা দেশে ডলার আনছে তাদের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা না দেয়া। এছাড়া প্রশ্ন না করে যেন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ যে কোন ব্যাংকে জমা করতে পারে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা আরও কঠোর করা প্রয়োজন। দরকার আরো নজরদারি। বিশেষ করে, যেসব পণ্যের উৎপাদনশীলতা বা পুনঃউৎপাদনশীলতা নেই; অর্থনীতি তার ঘরে না ফেরা পর্যন্ত সেসব পণ্য আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তারা।