দেশে ৮৬ টাকায় মার্কিন ডলার বিক্রি হয়েছে ২০২২ সালে। বর্তমানে যার দাম কিছুটা কমলেও তা গড়ে ১২১ টাকা। হিসাবের খাতা বলছে, তিন বছরে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
দুই মাস আগে আইএমএফের শর্ত পূরণ ও অর্থনীতির সুফল পেতে মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার কিছুটা সুফল পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্গে রেকর্ড প্রবাসী আয়, রিজার্ভ বেড়ে যাওয়াসহ রপ্তানির বিপরীতে আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রিজার্ভ থেকে ৫০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের পরও দাম যেন অস্বাভাবিক না বেড়ে যায়, সেজন্য নজরদারি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার অংশ হিসেবে আন্তঃব্যাংকের ডলারের দাম বিশ্লেষণ করে মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি সেই দর নেমে আসে ১১৯ টাকায়, যার বিপরীতে বলা হয়েছে টাকার মান বেড়েছে। সঙ্গে কমেছে আরও মুদ্রার দর।
এদিকে, মানি এক্সচেঞ্জ মার্কেট ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদা কমে যাওয়ায় কমেছে ডলার মূল্যমান। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া মধ্যবর্তী দরের বেশি মূল্যে কেনাবেচা করছেন তারা।
মানুষ ট্রাভেল না করায় বাজার এই মুহূর্তে কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ নিয়ে মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন বক্তব্য, আগে বেশি দরে কেনায় এখনও ১২৪ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। ধীরে ধীরে সমন্বয়ের চেষ্টা করবেন বলে জানান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয় খুচরা মার্কেট। তাই প্রশ্ন ওঠে, এই বাজার তদারকির বাইরে কি না?
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম এস জামান বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান চলার জন্য তো কিছু লাভের দরকার। আজকের ২৪ বা ২৫ যে রেট আছে এটার সাথে এডজাস্ট করে আস্তে আস্তে রেট নিচের দিকে নামবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বাজারের টোটাল ইকোনমিতে বৈদেশিক মুদ্রার ভূমিকা খুচরা পর্যায়ে অতি নগণ্য।’
সম্প্রতি বাজার নিয়ন্ত্রণে ডলার প্রতি ১শ' সাড়ে ২১ টাকায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিলামে অতিরিক্ত ৪৮ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই পরিস্থিতিতে বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার কারণে ডলারের মূল্য হ্রাসের ধারা থেমেছে। এনিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যে প্রাইস কোট করে সেই কোটগুলো নিয়ে অ্যানালাইসিস করে একটা মিডরেট করে। সেই মিডরেটের তুলনায় যদি ২ শতাংশের বেশি মূল্য কমে যায় তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সুযোগ আছে ইন্টারভেন করে প্রাইসটাকে স্ট্যাবল রাখার।’
গবেষণা সংস্থা সিপিডি সামগ্রিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৃদ্ধিকে ইতিবাচক দেখলেও বলেন, খুব বেশি উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। অন্যদিকে, খুচরা বাজার মনিটরিংয়ের দাবি করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এখন যে জায়গায় ডলারের রিজার্ভটি তা হলে ম্রিয়মাণ অর্থনীতিতে ম্রিয়মাণ কর্মকাণ্ডের জন্য কম আমদানি। আমরা একটা ইতিবাচক অবস্থা দেখছি, এতে খুব বেশি উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। খোলা বাজারের রেটের পার্থক্য এখনো অনেক বেশি। সে জায়গা থেকে হয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে খোলা বাজারের মনিটরিংয়ের বিষয়টি দেখতে পারে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আমদানি কমার তথ্য উঠে এসেছে। ফলে রিজার্ভ কম ব্যবহার হওয়ায় কমেছে ডলারের মূল্য। আর ডলারের দাম কমায় কমেছে অন্যান্য মুদ্রার দামও।