বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম

বাজার , আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

২০২৩ সালে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি

২০২৩ সালে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের মূল্য আগের বছরের তুলনায় কমেছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত ডিসেম্বরে বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্য কমেছে ১০.১ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা'র ২০২৩ সালের সূচকে বলা হচ্ছে, বিগত বছরজুড়ে সারা বিশ্বেই দ্রব্যমূল্য কমার হার ছিল ১৩.৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই সময়ে চিনি বাদে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে।

|undefined

বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গেল বছর দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সর্বনিম্ন ছিল জানুয়ারি মাসে, ৭.৭৬ শতাংশ, যা আট মাসের ব্যবধানে আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ১২.৫৪ শতাংশে।

|undefined

২০২৩ সালে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি

২০২৩ সালে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির গড় ১০ শতাংশের নিচে নামেইনি; নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল বছরের শুরু থেকেই। বছরের শেষার্ধ্বে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির গতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও খাদ্যপণ্যে দামে লাগাম টানা যায়নি। উল্টো বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের তৎপরতা আরও বেড়েছে। গেল আগস্ট মাসে প্রথমবার দেশের বাজারে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়, যা এক দশকের মধ্যেও ছিলো সর্বোচ্চ। পরের টানা তিন মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের বেশি। বিশেষ করে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ১২.৫৬ শতাংশে পৌঁছায় যা দেশের ইতিহাসে ১১ বছর নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

|undefined

এমন পরিস্থিতিতে গেলো সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পরিবারে উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি। বছরজুড়ে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অথচ প্রতিবেশী ভারত, ভুটান, নেপাল, এমনকি গেলে বছরই অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষিত শ্রীলঙ্কা আর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই কম।

|undefined

বছরজুড়ে পণ্যের দাম ওঠানামা'র তথ্য

বছরজুড়ে আকাশছোঁয়া দামের কারণে মাছ, মাংস, ডিম, দুধের চাহিদা মেটাতে পারেনি অনেক পরিবার। কখনো ডিমের দাম আকাশ ছুঁয়েছিলো তো কখনো আলু-পেঁয়াজ চলে গিয়েছিলো সাধ্যের বাইরে। মাছ-মাংস তো বটেই, সবজিও সাধারণ মানুষের নাগালে ছিল না কিছু সময়। তেল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দার দামও ছিল অস্বস্তিকর পর্যায়ে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা টিসিবি'র তথ্য অনুযায়ী, গেলো বছর দাম কমেছে শুধু চাল আর ময়দার। বিপরীতে দাম বেড়েছে ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, ডিম, মশলা, মাছ ও মাংসের।

যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বছরজুড়ে বিশ্ব অর্থনীতি ছিল টালমাটাল। তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে ঘাটতি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বছরের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তারপরও গম, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে। অথচ দেশের বাজারে আমদানিকারকরা পণ্যের দাম কমায়নি ডলারের বিনিময়মূল্য এবং আমদানি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার দোহাই দিয়ে। ফলে বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য কমলেও কোনো লাভ হয়নি স্থানীয় ক্রেতা ও ভোক্তাদের। তারওপর এসব সমস্যাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সারাবছর বাজার সিন্ডিকেট চালিয়ে গেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এসএসএস