দেশের অভিজাত সুপার শপ, কিংবা শহুরে পাড়ার মোড়ের দোকানে চোখে পড়ে আকর্ষণীয় মোড়কে রাখা বিদেশি চা পাতা। আছে বিশ্বখ্যাত যুক্তরাজ্যের টুইনিংস, শ্রীলঙ্কার দিলমাহ ব্রান্ডের চা পাতাও।
এছাড়া চীন, ভিয়েতনামসহ নানা দেশ থেকে আমদানি হচ্ছে উচ্চমূল্যের এসব চা পাতা।
স্লিম টি, গ্রিন টি, মাসালা টিসহ নানা ফ্লেভারে আর ধরনে এসব চা পাতা বিক্রি হয়। অভিজাত ক্রেতারাই ভোক্তা। মূলত, সুপার শপগুলোতে বিক্রি হওয়া এসব চা পাতা আসে সরকারের অগোচরে।
উৎসব সুপারশপের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার জুলকার নাইন বলেন, ‘আমরা সরাসরি আমদানিকারকদের থেকে নিয়ে থাকি। এরপর সেটা গ্রাহকদের কাছে যায়। আর যেগুলো দেশি চা পাতা আছে, সেগুলোর ব্র্যান্ডের সাথে আমাদের সরাসরি চুক্তি আছে। তারা আমাদের সরবরাহ করে এবং আমরা সেটা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেই।’
চা বোর্ডের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে দেশে প্রায় ৫০১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে চা পাতা আমদানিতে। এর মধ্যে ২০২২ সালে দশ লাখ কেজি চা আমদানিতে ব্যয় ১৫২ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে ৮৬ মিলিয়ন ডলার এবং সবশেষ ২০২৪ সালে চা আমদানিতে ব্যয় ১২৩ মিলিয়ন ডলার। চা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, হাতে গোনা দুই-একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার চা আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিপুল এই চা পাতা আমাদনি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে ডলার ব্যয়ের পাশাপাশি, রাজস্ব হারায় সরকার।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘চায়ের ফ্লেভার বা টি ব্যাগ তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু চা আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যে কীভাবে আমদানি কমিয়ে রপ্তানিটা আরো বাড়ানো যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে যেহেতু যথেষ্ট চা উৎপাদন হচ্ছে, প্রয়োজনে আমরা আমাদের দেশেই গ্রীন টি ফ্যাক্টরি তৈরি করতে চেষ্টা করবো।’
শুধু তাই নয়, প্রতিবছর সীমান্তে চোরাইপথেও প্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ চা পাতা। যার কিছু জব্দ করতে পারে বিজিবি। অথচ দেশে ২০২৪ সালে চা উৎপাদন হয় নয় কোটি কেজিরও বেশি। চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় পৃথিবীর অন্তত ২০টি দেশে। বাড়তি উৎপাদনের কারণে নিলামে বিপুল চা পাতা থেকে গেছে অবিক্রিত। এমন অবস্থায় আমদানি ঠেকানো না গেলে পুরো শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে দাবি বাগান মালিকদের।
ফটিকছড়ির চৌধুরী টি এস্টেট মো জাহাঙ্গির চৌধুরী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চা এনে এখানে কম দামে বিক্রি করা হয়। কেননা সেগুলো অবৈধভাবে কম দামে আনা হয়।’
এভাবে চা আমদানি বাড়ার পেছনে সরকারের নীতিগত দুর্বলতা ও নরজরদারির অভাবকে দুষছেন চা খাত সংশ্লিষ্টরা। আমদানি ঠেকাতে একইসাথে দেশে ভালোমানের চা পাতা উৎপাদনের দাবি তাদের।
চট্টগ্রামের টি প্যাকেটিয়ার্স মো. সায়েম খাদেম বলেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে কঠোরতা আনতে হবে তবে তার আগে আমাদের এখানে চায়ের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।’