‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনে ইউজিসিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি

সাত কলেজ
শিক্ষা
1

সাত কলেজ সমন্বয়ে ‌‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠন করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ (সোমবার, ৪ আগস্ট) সকালে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মজিবুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কলেজগুলোকে চারটি স্কুলে ভাগ করে (স্কুল অব সায়েন্স, স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ, স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস) পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

ইউজিসির সদস্য তানজিম উদ্দিন খান জানান, সাত কলেজের বিভাগ ও আসনের সংখ্যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। তবে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মার্জ করা হবে কি না, তা এখনও নির্ধারিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি চালু হবে কি না, সেটি সেই সময়কার প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।

এসময় আগের সরকারের যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সমালোচনা করেন ইউজিসির সদস্য তানজিম উদ্দিন খান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা হবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও হাইব্রিড; যেখানে ৪০% অনলাইন এবং ৬০% অফলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। সব ধরনের পরীক্ষা সশরীরে নেওয়া হবে। ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম চারটি সেমিস্টারে নন-মেজর কোর্স করবে এবং পরবর্তী চারটি সেমিস্টারে ডিসিপ্লিন অনুযায়ী মেজর কোর্স পড়বে। পঞ্চম সেমিস্টারে নির্দিষ্ট শর্তপূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীরা ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করতে পারবে। তবে ক্যাম্পাস পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।

মজিবুর রহমান বলেন, ‘সবার জন্য সুবিধাজনক স্থানে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হবে। সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। একজন কেন্দ্রীয় প্রক্টর থাকবেন এবং প্রতিটি কলেজে একজন পুরুষ ও একজন নারী ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন। অর্থাৎ সাত কলেজে থাকবে ১৪ জন ডেপুটি প্রক্টর। সাত কলেজের মধ্যে পাঁচটিতে পূর্বের মতো উচ্চমাধ্যমিক স্তর চালু থাকবে। স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা টাইম, স্পেস ও রিসোর্স শেয়ারিং পদ্ধতিতে একই ক্যাম্পাস ব্যবহার করবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ হবে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং কলেজগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনাও কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হবে। প্রতিটি কলেজে থাকবে আধুনিক মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে এবং প্রতিটি ডিসিপ্লিনে যৌক্তিকভাবে ছাত্রসংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষেই ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হবে এবং স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা হবে। সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম (ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, আবেদন ইত্যাদি) ডিজিটাল সিস্টেমে সম্পন্ন হবে। শিক্ষার্থীরা যেকোনো অনুসন্ধান আইটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করতে পারবে। বিদ্যমান শিক্ষার্থীরা পূর্বের কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সেশনজট কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ধাপগুলো হলো: খসড়া আইন প্রণয়ন; খসড়া আইন অনুমোদন ও অধ্যাদেশ জারি; শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর; প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে উপাচার্য নিয়োগসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ।

ইউজিসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়নযোগ্য। এই কাঠামো চূড়ান্ত করে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন/অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির অনুরোধ জানিয়ে ইতোমধ্যে ইউজিসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাতটি কলেজ হলো—

১. ঢাকা কলেজ

২. ইডেন মহিলা কলেজ

৩. সরকারি বাঙলা কলেজ

৪. সরকারি তিতুমীর কলেজ

৫. বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ

৬. কবি নজরুল সরকারি কলেজ

৭. সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

এনএইচ