ডাকসু নির্বাচন: প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী ৪৬২ জন, ৪৭ জন ত্রুটিপূর্ণ

চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার ব্রিফিং
ক্যাম্পাস
শিক্ষা
0

ডাকসুতে এবার ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ ব্যানারে প্যানেল দিলেন উমামা ফাতেমা। আজ (বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট) বিকেলে আল সাদি ভুঁইয়াকে জিএস ও জায়েদ আহমেদ খানকে এজিএস প্রার্থী করে মোট ২৮ জনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়া হয়। এদিকে নয় প্যানেলের পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীরা খুঁজছেন যোগ্য প্রার্থী। তারা বলছেন, ক্যাম্পাসের সমস্যা সমাধান ও হলের নানা অনিয়ম বন্ধে যারা কাজ করবে তাদেরকেই চান ডাকসুতে। এদিকে যাচাই বাছাই শেষে ভিপি পদে বৈধতা পেলেন ৪৮ প্রার্থী, জিএসে ১৯ এবং এজিএস পদে লড়বেন ২৮ জন। সবমিলিয়ে প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী ৪৬২ জন, ৪৭ জন ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়াও ১৩টি পদে হলগুলোতে বৈধ প্রার্থী এক হাজার ১০৮ জন।

ডাকসু নির্বাচনের আর বাকি ১৮ দিন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্যানেল ঘোষণা করেছে বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠন। ক্যাম্পাসে জোরেশোরে চলছে প্রচার। মধুর ক্যান্টিন আর ডাকসু যেন তারই কেন্দ্রবিন্দু। এলেই দেখা মিলছে প্রার্থী ও ভোটারদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের নায়করাই এবারের ডাকসু নির্বাচনের জনপ্রিয় মুখ। তাই শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাটাও এবার একটু বেশি। তবে আবাসিক হলের সমস্যা নিরসন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যারা কাজ করবে তাদের ভোট দিতে চান নতুন ভোটার ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থী সাদিত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় প্রত্যাশা করি যে, আমাদের যে নির্বাচিত সদস্যরা হবেন তারা আমাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

এবার সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী অংশ নেবেন। বড় ভোট ব্যাংক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ নারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সবারই চাওয়া যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত হোক।

একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘৪১টি ভোট আমি নির্দিষ্ট কোনো দলকে দেবো এটা আমি ভাবিনি। বিভিন্ন দল থেকে ব্যক্তি হিসেবে যাকে আমার ভালো লাগবে তাকে আমি দেবো।’

মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে, ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপারে নাম, নাম্বারের পাশাপাশি প্রার্থীদের ছবি লাগানোর দাবি জানায় ছাত্র অধিকার পরিষদ। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় সংগঠনটি।

ছাত্র অধিকার পরিষদের বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক দাবির কথা বলছি। ২০১৯ সালে যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, যাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে, রেকর্ড আছে সেই বিষয়গুলো, সেগুলোর আপনারা বিচার করেন। সেগুলোর বিচার তারা করছে না, সেগুলো ঝুলিয়ে রেখেছে।’

আরও পড়ুন:

পরে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল সংবাদ সম্মেলনে জানায়- ডাকসুতে জয় পেলে, আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে কাজ করবেন তারা।

ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর যে প্রথমে গেস্টরুম, গণরুমে গিয়ে তার সিনিয়রদের কাছ থেকে শুনছে ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা করতে হবে না, পড়াশোনার প্রয়োজন নেই, রেজাল্ট প্রয়োজন নেই। দুইদিন পর বিসিএসের পড়াশোনা করবা, না হলে রাজনীতি করো, মিছিল করো, এই যে নিকৃষ্ট ধ্যান ধারণা, বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেয়ার ধ্যান-ধারণা- এখান থেকে নিঃসন্দেহে আমরা বেরিয়ে আসবো এবং সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আমরা মূলোৎপাটন করবো।’

বিকেলে অপরাজেয় বাংলায় উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। উমামা ফাতেমা ভিপি, আল সাদি ভুঁইয়া জিএস এবং জায়েদ আহমেদ খানকে এজিএস প্রার্থী করে মোট ২৮ জনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা দেয়া হয়।

উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমরা আজকে এ প্যানেলটি যে ঘোষণা করেছি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য। আমরা মনে করি এই ঐতিহাসিক ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে আমরা এ প্যানেলটি ঘোষণা করেছি। আমরা গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক ও অ্যাকাডেমিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা সে সংস্কারের কথা আমরা আমাদের প্যানেলের মধ্য দিয়ে তুলে আনবো।’

কমিশনের পূর্বঘোষিত সাতটি বিষয় নিশ্চিত করেই মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:

চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন,‘ মোট ৪৬২ জন ছাত্রছাত্রী ডাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন পদে প্রতিযোগিতা করার জন্য বৈধ প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।’

ডাকসুতে ভিপি পদে ৪৮ জন, জিএস পদে ১৯ জন এবং এজিএস ২৮ জন বৈধ প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা দেয়া হয়েছে। ১৩টি পদে হলগুলোতে বৈধ প্রার্থী এক হাজার ১০৮ জন। যাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে তারা ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন বলে জানান চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এছাড়া আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত হল ও ক্যাম্পাসে ডাকসুর প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এবার সর্বাপেক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দর ডাকসু নির্বাচন উপহার দেয়ার আশা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

এসএস