স্বপ্নময় পাহাড়, নীল সমুদ্র আর সবুজ বনভূমি—এগুলোই বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পর্যটনের মূল আকর্ষণ। এ সৌন্দর্যের ওপরই এখন নেমে এসেছে মানুষের নগ্ন হস্তক্ষেপ। সাদা পাথরের ভোলাগঞ্জ মরুভূমির মতোই নিস্তব্ধ, কক্সবাজারের সমুদ্র-সৈকত হাঁপাচ্ছে দূষণে, আর শালবন উজাড় করে জ্বলছে দখলের অগ্নিশিখা। লোভ আর অব্যবস্থাপনায় নিঃশেষ হচ্ছে প্রকৃতি, হুমকির মুখে পর্যটনের ভবিষ্যতও।
দিনের পর দিন পাহাড় কেটে, নদী খুঁড়ে লুটে নেয়া হয়েছে পাথরের ভাণ্ডার। এ অপরিকল্পিত খনন কেবল প্রাকৃতিক ভারসাম্যই নষ্ট করছে না—ঝুঁকিতে ফেলছে নদী, পাহাড়, আর জীববৈচিত্র্যের পুরো বাস্তুতন্ত্র।
পর্যটকরা জানান, সমস্যা সমাধানে ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।
শুধু ভোলাগঞ্জ নয়—মানুষের আগ্রাসী আচরণ থেকে রক্ষা পায়নি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতও। কিছুদিন আগেও শহরের ময়লা পানি সরাসরি সমুদ্রে ফেলতে তৈরি করা হয়েছিল কৃত্রিম খাল।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত এখন দূষণের চাপে হাঁপাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন স্বাস্থ্য, জেলে ও ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু প্রকৃতি ও পর্যটনের সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাত এসেছে শালবনে। অভিযোগ— দখল আর অবৈধ ব্যবসার স্বার্থে মানুষই লাগায় এ আগুন।
বনে মানুষের অত্যাচার শুধু অগ্নিকাণ্ডেই থেমে নেই। অবৈধভাবে গাছ কেটে নেয়ার মতো অভিযোগ পুরনো হলেও এখনো বহাল। প্রকৃতির এমন ক্ষয় কেবল সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, হুমকিতে ফেলছে মানুষের জীবিকা, নিরাপত্তা, এমনকি প্রাণও। তাই পর্যটন ও প্রকৃতির প্রতি রাষ্ট্রকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ পরিবেশবিদদের।
প্রাণ ও পরিবেশ বিষয়ক গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ বলেন, ‘রাষ্ট্রকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে, সাহসী হতে হবে এবং অবশ্যই রাষ্ট্রকে তার আইন, বিচার ব্যবস্থা এবং তার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে মানুষ, প্রাণ, প্রকৃতি সবকিছুর জন্য।’
প্রকৃতি ও পর্যটনের প্রতি গুরুত্ব না দিলে, একদিন রাষ্ট্রই হয়ে উঠবে বসবাসের অযোগ্য। সেই সঙ্গে বিলীন হবে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।