শহরের ইমারত পেরিয়ে দিনের সূর্যটা যেমন অস্তমিত, মফস্বলে পেশাদার ফটোগ্রাফির প্রেক্ষাপটও তেমনই। ক্রমেই কমছে পেশাটির কদর। মুঠোফোনের দাপটে স্টুডিও পাড়ার চিত্র বদলে গেছে পুরোপুরি। ছবি তোলা, এডিট করা, সংরক্ষণ কিংবা প্রিন্ট সবই এখন হাতের মুঠোয়। ফটোগ্রাফির উত্তর-আধুনিক যুগে পেশাদারদের জায়গা যেন শুধুই অতীতের গল্প। ফেনী শহরে একসময় যেখানে ছিল দুইশ'র বেশি স্টুডিও এখন সেখানে টিকে আছে হাতেগোনা কয়েকটি।
পেশাদার ফটোগ্রাফারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ল্যাব প্রিন্টের ব্যাপারটা একদমই কমে গেছে। এখন মোবাইলে মোবাইলে সব প্রিন্ট হয়ে যাচ্ছে। আর প্রিন্টার এসে আগে যে মানুষের ল্যাবের প্রতি একটা আগ্রহ ছিল, এখন সেটা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।’
একসময় ছিল এসএলআর ক্যামেরা, রিল, ডার্করুমের আলো-আঁধারি। ফটো স্টুডিও মানেই ছিল এক জমজমাট সৃজনশীল কর্মক্ষেত্র। এখন সেইসব সরঞ্জাম, সেই আবহ সবই ইতিহাস।
আগে বাসার ফটো অ্যালবামে পরিবারের সবাই মিলে ছবি দেখতো উৎসবের মতো। প্রবীণ ও ইতিহাসবিদরা বলছেন, এই জনপদে ফটোগ্রাফির ইতিহাস প্রায় শত বছরের। কালের আবর্তনে এখন তা ম্রিয়মাণ।
লেখক ও ইতিহাসবিদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য মানুষকে আগে স্টুডিওতে আসতে হত। বর্তমানে আমরা মোবাইলের মাধ্যমে সব ছবি তুলে ফেলি। এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত ছিল তারাও এখন এই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে।’
তরুণ যারা ফটোগ্রাফির জৌলুস দেখে স্টুডিও চালু করেছিলেন তারা কিছুটা হতাশ। অনেকে প্রশিক্ষণ ছাড়াই পেশায় এসেছেন, কাজের মান নিয়ে কেউ ভাবে না। এতে নষ্ট হয়েছে বাজার, নষ্ট হয়েছে আস্থা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘এখন অনেকেই ক্যামেরা কিনে ফেলছে। হয়ত তারা ক্যামেরার ব্যাপারে কিছুই জানে না বা শিখেনাই। তাছাড়া মোবাইল ফোন চলে আসায় এখন সবাই মোবাইল ফোনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে।’
পেশা হিসেবে টিকে না থাকলেও ফটোগ্রাফির সোনালি যুগের স্মৃতি যেন বর্তমান প্রজন্মের কাছে না হারায়, এ প্রত্যাশায় এখনও বেঁচে আছেন কিছু ছবির কারিগর।