ওষুধ উৎপাদনে সক্ষমতা থাকলেও কাঁচামালে বিদেশ নির্ভর বাংলাদেশ

দশ মাসে দাম বেড়েছে  বিদেশ থেকে আনা ওষুধের
দেশে এখন
স্বাস্থ্য
0

গত দশ মাসে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো দাম না বাড়ালেও বিদেশ থেকে আমদানি করা ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনিসহ জটিল রোগের ওষুধের দাম বেড়েছে। দেশে মোট ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে স্থানীয় কোম্পানিগুলো। তবে উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করলেও প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। ফলে দেশীয় বাজারে ওষুধের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। একমাত্র এপিআই শিল্পপার্কে সরকারি নীতিগত সহায়তার অভাবে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে হলে দেশীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনের বিকল্প নেই।

তিন বছর ধরে ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়ছেন ব্যবসায়ী বাবুল খান। খেতে হয় বিদেশি ওষুধ। কয়েকমাসে ওষুধের দাম বাড়ায় হতাশা তার চোখেমুখে।

দেশে ওষুধের জোগানের ৯৮ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করে স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি। বাকি যেটুকু বিদেশ থেকে আনতে হয়, সেসব প্রধানত স্কিন, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। দোকানিরা বলছেন, গত ছয় মাসে দাম বেড়েছে বিদেশি ওষুধের।

বিক্রেতারা জানান, প্রতি সপ্তাহেই একশো থেকে দুইশো করে ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে। একটি ইনসুলিন যা আগে আটশো টাকায় পাওয়া যেতো তা এখন নয়শো টাকা হয়ে গেছে।

এদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপে গত নভেম্বর থেকে দাম বাড়েনি দেশীয় কোম্পানির কোনো ওষুধের। তারপরও দাম আরও কমানোর অনুরোধ ক্রেতাদের।

ওষুধ প্রস্তুতকারকরা দেশের চাহিদার প্রায় পুরোটা মেটানোর পাশাপাশি ১৬২ দেশে রপ্তানিও করছে। ওষুধ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করলেও অধিকাংশ কোম্পানি ওষুধের মূল কাঁচামাল ভারত, চীন বা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কাঁচামাল আমদানি নির্ভরতা কমাতে ওষুধ শিল্পকে সহায়তায় ঢাকার অদূরে গজারিয়ায় এপিআই শিল্পপার্ক করেছে সরকার। এখানে নিজস্ব অবকাঠামো গড়ে তুলে কাঁচামাল উৎপাদন শুরু করেছে মাত্র চারটি কোম্পানি ।

আরও পড়ুন:

ওষুধ তৈরিতে দরকার হয় চারশো ধরনের এপিআই। ফলে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতিবছর অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার এপিআই আমদানি করতে হয়।

দেশে অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস তৈরিতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। শুধু তাই নয় এর মাধ্যমে বছরে এক দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের আমদানি খরচও বাঁচানো যাবে।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘সবকিছু ঠিক রেখে সমস্যার সমাধান করতে পারি। এ বিষয়ে আমাদের সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে। আমরা সামান্য কিছু প্রটেকশন নিয়ে এ ইন্ডাস্ট্রিকে গ্লোবাল লেভেলে নিয়ে যাবো।’

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘গ্যাস বিদ্যুৎের বিকল্প কোনো পথ খুঁজে বের করতে হবে। ফান্ডিং এর বিষয় দেখতে হবে। অনেকগুলো সফট লোন আছে যেগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে না।’

কাঁচামাল উৎপাদন শিল্পের সব কাজ দ্রুত করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান এই কর্মকর্তা।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদের সার্বিক সহায়তা দিতে পারলে তারা অত্যন্ত সাফল্যর সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।’

ওষুধে পরনির্ভরতা কমাতে হলে দেশে এপিআই তৈরির বিকল্প নেই বলে মতামত ওষুধ প্রশাসনের সাবেক এ পরিচালকের।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, এ শিল্পে আরও বেশি ট্যাক্স সুবিধা দেয়া দরকার। পাশাপাশি টেকনোলজ্যিক্যাল সহায়তা দিতে হবে’

এফএস