এক বুক আশা নিয়ে সোনার হরিণ ধরতে বিদেশে পাড়ি জমান বহু বাংলাদেশি। এর জন্য উচ্চ সুদে ঋণও নিয়ে থাকেন কেউ কেউ। একসঙ্গে ঋণের বোঝা ও পরিবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম অবস্থা অনেকের। চাপ সামলাতে না পারায় ঘিরে ধরে হতাশা। বিষন্নতায় একসময় মনের অজান্তেই বেছে নেন আত্মহননের পথ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলো বছর ৩০ জনের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি আত্মহত্যা করেছেন। এর জন্য মানসিক চাপ, প্রতারণার শিকার, সম্পর্কে টানাপড়েন, বিচ্ছেদ, পারিবারিক চাপকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, ‘অনেকেরই এরকম হয়েছে যে তারা লোন করে এখানে এসেছেন, তিনি সেই লোনের টাকা শোধ করতে পারছেন না, চাপটা তার পরিবারকে নিতে হচ্ছে। এরপর সেই চাপটা আবার ওই প্রবাসীর ওপর-ই ফিরে আসছে। এ চাপটা নিতে না পেরেই হয়তো তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন:
দূতাবাসের শ্রম উইং জানায়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের বীমা চুক্তি অনুযায়ী মৃত্যুজনিত বেনিফিট ১০ লাখ টাকা। আর বীমার ঝুঁকি গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে এমন পরিণতি হলে ওই প্রবাসী বীমার সুবিধা বঞ্চিত হবেন।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস কাউন্সেলর লুৎফুন নাহার নাজীম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো যারা প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের আওতায় তারা এ বীমার আওতাভুক্ত হচ্ছে। এক্সিস্টিং যে লেবাররা আছে এ লেবার মার্কেটে, তারা নতুন করে হতে পারছেন না। নতুন যারা বিদেশে আসছেন, তারা এ বীমা সুবিধাটি পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এটা আরও এক্সটেন্ড করা হবে।’
বিদেশ যাত্রায় উচ্চ সুদের ঋণ নেয়া থেকে বিরত থাকলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রদূত। প্রয়োজনে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসী ঋণ সুবিধা গ্রহণের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
তারেক আহমেদ বলেন, ‘যখনই একটা সুদের মধ্যে সে ঢুকে যাচ্ছে, তখন তার মধ্যে একটা চাপ সৃষ্টি হয়। বিদেশে আসা মাত্রই যে তার ভাগ্য খুলে যাবে বা টাকার পাহাড় গড়ে উঠবে এমন নিশ্চয়তা তো তাকে কেউ দিচ্ছে না। তাই এটা পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। তবে নিতান্তই যদি এমন হয় যে, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, শুধু অল্প কিছু টাকার জন্য তার বিদেশে যাওয়া আটকে আছে, সেক্ষেত্রে সে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের দারস্থ হতে পারে।’
অনক প্রবাসী মনে করছেন, সংকটকালীন সময়ে পারিবারিক সহযোগিতা প্রবাসীদের মনোবল বাড়াতে পারে। প্রান্তিক প্রবাসীদের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে থাকা প্রবাসীদের মতবিনিময় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি করা গেলেও বাড়বে সচেতনতা, কমে আসবে আত্মহননের পথ বেছে নেয়ার প্রবণতাও।