দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করার পর একবারে দেশে ফিরে আসেন প্রবাসীরা। দীর্ঘদিন পরিবারের ভরণপোষণ দিয়ে দেশের ফেরার পর তেমন সঞ্চয় থাকে না তাদের। মাসিক আয়ও নেমে আসে নূন্যতম অঙ্কে।
মধ্যপ্রাচ্যের তাপমাত্রা, কর্মক্ষেত্রে রাসায়নিক সংস্পর্শ, মানসিক চাপ কিংবা নির্যাতনে অনেকেই আক্রান্ত হন জটিল রোগে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের গবেষণা বলছে, ৮০ শতাংশের বেশি প্রবাসী শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। যাদের অধিকাংশই ভোগেন ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে।
আল আইনের এনএমসি স্পেশালাইজড হসপিটালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘সাধারণত প্রবাসীরা ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন। বৈরি কর্মক্ষেত্রের কারণে বেশিরভাগেরই হার্টের রোগ, ফুসফুসের রোগ, কিডনির ভয়াবহ রোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’
মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে রোগীদের বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। স্বাস্থ্য-বীমা থাকায় স্বল্প খরচেও চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন অনেকে। কিন্তু ভাষা জটিলতা থাকায় বড় রোগ নিরাময়ের জন্য বেশিরভাগ প্রবাসী ফিরে আসেন দেশে।
আল শার্ক হেলথকেয়ার ফুজাইরাহ কেইস ম্যানেজার হেলাল নুর বলেন, ‘এ দেশে চিকিৎসার ব্যয় বেশি হওয়াতে তারা যখন অক্ষমতা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু অপশন দেয় যে কিছু চ্যারিটি বা সংগঠন যারা এ দেশের সরকার দ্বারা অনুমোদিত।’
আল জার্ফ মেডিকেলের মার্কেটিং ম্যানেজার সুলতান আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে আমি সহযোগিতা করছি, সে দেশে যাওয়ার পর যদি আমি সহযোগিতা না পাই এটা একজন প্রবাসীর জন্য খুবই কষ্টের।’
আরও পড়ুন:
জীবনের শেষ সময়ে রোগবালাইয়ের সঙ্গে লড়তে গিয়ে কেউ সঞ্চয় ভাঙেন, কেউ বিক্রি করেন জমি বা স্ত্রীর গহনা। ঋণ করে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনিশ্চিত এক জীবন কাটাতে হয় তাদের।
প্রবাসীরা জানান, বিদেশে ডাক্তারদের শারীরিক সমস্যার কথা বুঝাতে অক্ষম হওয়ায় প্রবাসীরা দেশে যান চিকিৎসার জন্য। তাই তাদের অতি জরুরি স্বাস্থ্য বীমা চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রবাস ফেরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্বল্প খরচে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য-বীমা ও হেলথ কার্ডের বিকল্প দেখছেন না প্রবাসীরা। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের কথাও বলছেন তারা। প্রবাসীদের জন্য হেলথ কার্ড চালু, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রবাসী কাউন্টার, প্রবাসী কমিউনিটি ফান্ড তৈরিতে রেমিট্যান্সের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততার ওপরও জোর দিচ্ছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীরা বলছেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জীবনের বেশিরভাগ সময় যারা দেশের সমৃদ্ধি ও রেমিট্যান্সের পেছনে ব্যয় করেন শেষ বয়সে সুখী ও সুস্থ জীবনযাপন তাদের নাগরিক অধিকারও।