অজানা গন্তব্যে ছুটে চলার দিক-নির্দেশনা দিয়ে বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগলের অ্যাপ গুগল ম্যাপ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতায় নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় অনেক জায়গাতেই গুগল ম্যাপের বিস্তার ঘটতে দেয়নি চীন-রাশিয়ার মতো অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ।
বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও, মার্কিন মিত্র হিসেবে খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ায় গুগল ম্যাপ কাজ করে না, এমন তথ্যে যে কাউকেই অবাক হবেন। আসলেই ঘটনা, সত্য! গুগল ম্যাপ সব জায়গায় কাজ না করায় দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণ পিপাসুদের যাত্রা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ছে। গুগল ম্যাপের বিকল্প হিসেবে স্মার্টফোনে ডাউনলোড করতে হচ্ছে কোরিয়ার তৈরি তিনটি ভিন্ন অ্যাপ। এমনকি এসব অ্যাপের ব্যবহার বিধিও বেশ জটিল। ভুক্তভোগী পর্যটকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমন খবরই প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠেছে, ভালো সম্পর্কের কারণে যে দেশটিতে মার্কিন সেনা পর্যন্ত মোতায়েন রয়েছে; সে দেশে ঠিক কী কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ম্যাপিং অ্যাপের ব্যবহার নেই? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া-গুগলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রায় ২০ বছরের পুরনো। জাতীয় নিরাপত্তা জনিত উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে গুগলকে মানচিত্রের নেভিগেশন নির্দেশাবলী অন্তর্ভুক্ত করতে দিচ্ছে না সিউল।
এমন পরিস্থিতির জন্য অবশ্য গুগলকেই দায়ী করা হয়। কারণ ২০০৮ সালে বেশ কয়েটি কোরিয়ান স্থানকে জাপানি নাম দিয়ে ম্যাপিং করেছিলো গুগল। সেই বিষয়টিই মূলত গুগল-সিউলের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। কারণ ম্যাপে ব্যবহার করা বিতর্কিত নামগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। যা ১৯ শতকের প্রথম তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জাপানি ঔপনিবেশিক অঞ্চল ছিল।
এরপরই মূলত গুগলকে ম্যাপিং করতে বাধা দেয় দেশটি। এমনকি কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখায়, এর অনুমতি দিলে তাদের সামরিক ঘাঁটি এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা জনিত তথ্য বাহিরে প্রকাশ পেলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক স্কট ম্যাককুইয়ার মনে করছেন, গুগল ম্যাপের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা সিউলের উদ্বেগ সম্ভবত অতিরঞ্জিত। কারণ প্রয়োজনে গুগল ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে মানচিত্র পাওয়া যায়।
এদিকে গুগল বলছে, এরমধ্যেই দক্ষিণ কোয়ার আপত্তিকর তথ্য ম্যাপ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে গুগল ম্যাপকে যাতে কিছুতেই দেশের ডেটা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া না হয়; সে ব্যাপারে সোচ্চার কোরিয়ার ম্যাপিং অ্যাপ নাভার এবং কাকাও-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এটি করলে কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অবিচার করা হবে বলেও যুক্তি তুলে ধরেছে তারা। এমনকি ২৩৯টি সংস্থার ওপর চালানো সাম্প্রতিক এক জরিপে ৯০ শতাংশই গুগল মানচিত্রে দেশের ডেটা রপ্তানির বিরোধিতা করেছে।