বৈশ্বিক চাপে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং খাত

বিদেশে এখন
0

বৈশ্বিক চাপে আর্থিক লেনদেনে গোপনীয়তা আর বিশ্বাসযোগ্যতার অবস্থান নড়বড়ে হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং খাতের। সেইসঙ্গে দেশটির দুই গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএস আর ক্রেডিট সুইসের একীভূত হওয়ার ঘটনাও স্বাভাবিক প্রভাব ফেলেনি ব্যাংক খাতে।

ডিজিটাল অর্থনীতির এই যুগে নির্ভরযোগ্যতা আর নিরাপত্তার সঙ্গে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। গ্রাহকের পরিচয় গোপন থাকায় অবৈধ অর্থের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাতি আছে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং খাতের। এই দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্থ জমা রাখলে সেই অর্থ গ্রাহক চাইলেই করের আওতামুক্ত রাখতে পারে। ফাঁকি দিতে পারে মোটা অঙ্কের কর।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আর্থিক লেনদেনে গোপনীয়তা রক্ষায় নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এই ব্যাংকগুলো। যে কারণে বিশ্বের ধনী আর প্রভাবশালীরা নিজেদের অর্থ সম্পদ জমা রাখতে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করেন। কিন্তু এবার হাওয়া বইছে অন্যদিকে। সুইস আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণযোগ্যতা দিনের পর দিন ম্লান হচ্ছে। হয়তো শেষ হতে চলেছে সুইস ব্যাংকগুলোর স্বর্ণযুগ।

বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন আর সম্পদের তথ্য গোপন রাখতে এতোদিন ঢাল হিসেবে কাজ করেছে লেনদেনে গোপনীয়তা রক্ষার নীতি। স্বচ্ছতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নীতি আর ধরে রাখতে পারছে না সুইস ব্যাংকগুলো। অবৈধ অর্থের অভয়ারণ্য না থাকায় অভিজাতদের নির্ভরযোগ্যতা হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরটি'র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

এরমধ্যে চ্যালেঞ্জ আসছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। সুইস প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিমানা আরোপের সব সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মার্কিন সরকার। বারাক ওবামা প্রশাসনের 'ফরেন অ্যাকাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স অ্যাক্ট'এর আওতায় মার্কিন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন সব জটিল আর্থিক বিবরণী প্রকাশে বাধ্য হচ্ছে সুইস ব্যাংকগুলো। অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি অর্থ গচ্ছিত রাখলে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশ করতে হচ্ছে শতাধিক দেশের কাছে। বিপাকে পড়ছে দেশের গ্রাহকসহ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের গ্রাহকরা। বাড়ছে সুইস বিভিন্ন ব্যাংককে জরিমানা করার সম্ভাবনাও। কমছে সুইজারল্যান্ডের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা।

অন্যদিকে, ইউরোপের বিত্তশালীদের বেশি গুরুত্ব দেয়ায় কমেছে এশিয়া থেকে গ্রাহকও। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে সুইস আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন আর আর্থিক লেনদেনের স্বর্গরাজ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন না অনেকেই। সাম্প্রতিক আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ২০২২ সালে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক মুনাফা কমেছে ৭২০ কোটি ডলার।

এরমধ্যে ইউবিএস ব্যাংকের ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে অধিগ্রহণের ঘটনা, আরও অস্থিরতা তৈরি করেছে। এরপরই বিশ্বব্যাপী ৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে ইউবিএস ব্যাংক থেকে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যাহত হয় সেবা কার্যক্রম। ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণের পর ইউবিএস'কে ব্যয় সংকোচনেও যেতে হয়। অনিশ্চয়তার মধ্যে কমছে সুইস আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সুইস ব্যাংকার বরিস কলারডির দাবি, ‘সব কালো অর্থ এখন দুবাই না হয় মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।‘

একসময় আর্থিক লেনদেন, কর ফাঁকি আর অর্থ জমা রাখার নিরাপদ স্বর্গরাজ্য এখন আর বিশ্বাসযোগ্য নয় গ্রাহকদের কাছে, এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যতও অনুমান করা কঠিন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের নীতিতে পরিবর্তন আনা উচিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ব্যাংকিং খাতে গোপনীয়তা, আন্তর্জাতিক চাপ আর বিশেষ গ্রাহকদের অগ্রাধিকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সুইস প্রতিষ্ঠানগুলোকে। থাকতে হবে বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার ধারায়।

এসএস