ইতালির রোমে কলোসিয়ামে লাখো ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক শুক্রবার উদযাপন করেন গুড ফ্রাইডের রীতি 'ওয়ে অব ক্রস'। যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার দিনটিকে 'গুড ফ্রাইডে' হিসেবে প্রতি বছর পালন করেন সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরা।
মর্মান্তিক দিনকে স্মরণ করেন দিনভর না খেয়ে থেকে এবং প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে নিজেদের আঘাত করে, কেউ কেউ ক্রুশ হয়ে যিশুর বেদনা অনুভব করার চেষ্টা করেন।
একজন জানান, প্রথম পাঁচ সেকেন্ড খুব ব্যথা হয়। সময়ের সাথে রক্ত গড়াতে গড়াতে ব্যথা ম্লান হতে থাকে এবং ক্রুশে বেশি সময় থাকতে পারি। ৩৬ বার এ কাজ করেছি। নিজের জন্য কাজ চেয়েছি ঈশ্বরের কাছে। দেশের জন্য শান্তি চেয়েছি।
লন্ডনের ট্রাফাল্গার স্কয়ার, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে শুরু করে, এমনকি সিরিয়া-লেবাননের মতো মুসলিম অধ্যুষিত অনেক দেশে খ্রিস্টান ও ক্যাথলিক সংখ্যালঘুরাও নানা আয়োজন ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালন করেন গুড ফ্রাইডে। আর এর মধ্য দিয়েই যিশুর পুনরুত্থানের দিন ইস্টার সানডের ক্ষণ গণনা শুরু হয় দেশে দেশে।
সপ্তাহব্যাপী ইস্টার উৎসব ব্রাজিলে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী মশাল মিছিলের মধ্য দিয়ে। প্রতিবেশী বলিভিয়ায় প্রায় ২শ' আর্জেন্টাইন, পেরুভিয়ান ও বলিভিয়ান শিল্পী বালুর ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তোলেন পবিত্র বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র।
দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ গুয়াতেমালায় কাঁটা বিছানো পথ পাড়ি দিয়ে যিশুকে স্মরণ করেন মায়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসে পবিত্র সপ্তাহে ৩শ' বছরের পুরোনো রীতি অনুসরণে সায়োনিজ উদযাপন করেন হাজারো মেক্সিকান।
এক অধিবাসী বলেন, ‘এটা প্রাচীন রীতি আমাদের। যিশুকে যারা শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছিল, সেই সেনাদের বিশ্বাসঘাতকতা মনে করিয়ে দেয় সায়োনিজরা। এটা শুধু উৎসব নয়, ধর্মীয় রীতি আর যিশুর আবেগের প্রতিফলন।’
ইস্টার। মৃত্যুকে অতিক্রম করে জীবনের উদযাপন। খ্রিস্টান ধর্মবিশ্বাসে দিনটির অন্যতম প্রতীক ডিম। উর্বরতা আর পুনর্জন্মের প্রতীক ডিম ইস্টার উৎসবে ফাঁকা সমাধির প্রতিনিধিত্ব করে, যেখান থেকে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিলেন যিশু। আর তাই ইস্টারের সাজসজ্জা, প্রদর্শনী থেকে শুরু করে খাওয়াদাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ ডিম।
বিশেষ করে ডিমের আদলে বিশাল বিশাল চকোলেট তৈরির এ মৌসুমে ব্যস্ত সময় পার করে বেলজিয়ামসহ সুস্বাদু চকোলেটের জন্য বিখ্যাত বিভিন্ন দেশের বাঘা বাঘা সব প্রতিষ্ঠান।
ইউরোপের দেশ বসনিয়ায় ইস্টারের ঐতিহ্যবাহী একটি প্রচলন হলো ডিমকে জুতা পরানো। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে অবাক করা এ চর্চা। দেশটির ক্রেসেভো শহরে কয়েকশ' বছর আগে যখন খনন ও কামার শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে, তখন থেকে ডিমকে লোহার জুতার মতো আবরণ পরাতে সক্ষম, দক্ষ কামারকে নিজের পরিবার ও ব্যবসা শুরুর জন্য প্রস্তুত বলে মনে করা হতো।
এমনি এক কামার বলেন, ‘ক্রেসেভোতে এবং সম্ভবত সারা পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী কামার আমি। অনেক বছর ধরে ডিমে জুতো পরিয়ে আসছি। বাবার কাছ থেকে এ দক্ষতা অর্জন করেছি, বাবা এ গুণ পেয়েছেন দাদার কাছ থেকে। ডিমে জুতা পরানোর মানে হলো কামার শিল্পের স্নাতক পরীক্ষায় উৎরে যাওয়া।’
ইস্টার সানডে উপলক্ষে ক্রোয়েশিয়ার গ্যাবোভনিকা গ্রাম আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ৩৫ হাজার রঙিন বাতি দিয়ে সাজানো ডিম, খরগোশের পুতুলসহ ইস্টারের নানা প্রতীকে। স্পেনের কাতালোনিয়ায় ছিল কঙ্কালের সাজে জ্বলন্ত মশাল হাতে ঐতিহ্যবাহী 'ড্যান্স অব ডেথ' বা মৃত্যুর নাচের আয়োজন। বার্সেলোনার বিখ্যাত বেকারি শপগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে 'স্প্যানিশ ইস্টার কেক' নামে পরিচিত ফুটবল থিমের পেস্ট্রি। সেভিল শহরে ইস্টারের বর্ণাঢ্য লা মাদুরগা মিছিলও ছিল দেখার মতো।
মাত্র ৩০ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে যিশুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা চরিত্র জুডাসকে প্রতীকীভাবে তাড়ানো চেক প্রজাতন্ত্রের ঐতিহ্য। কালো পোশাক আর সাদা মুখোশ পরে কাঠের যন্ত্র দিয়ে শব্দ করে বাইবেলের কুখ্যাত চরিত্রটিকে ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর ভান করে মিছিলে অংশ নেন হাজারো মানুষ।
যুদ্ধ কবলিত ইউক্রেনে মনোবল ধরে রাখতে সেনাদের, গমচাষীদের ইস্টার কেক পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ আর তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও কেক বানানো ছাড়েনি পারিবারিক বেকারিগুলো।
মুসলিম আর ইহুদিদের পাশাপাশি খ্রিস্টানদেরও অন্যতম পবিত্র নগরী জেরুজালেমে শনিবার উদযাপিত হয় ইস্টারের হোলি ফায়ার বা পবিত্র আগুনের আনুষ্ঠানিকতা।