পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারমুখী নীতিতে ক্যাথলিক চার্চে নতুন দিগন্তের সূচনা

পোপ ফ্রান্সিস
বিদেশে এখন
0

বিশ্ব রাজনীতি ও ধর্মচর্চায় ক্যাথলিক চার্চের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ালেও, পোপ ফ্রান্সিসের প্রগতিশীলতা ফাটল ধরিয়েছে চার্চের ভেতরে। ক্যাথলিকদের পবিত্র ভূমি ভ্যাটিকানের উচ্চপর্যায়ে নারীদের অন্তর্ভুক্তিসহ নানা বিষয়ে অবস্থানের জন্য যেমন জনপ্রিয় ছিল সংস্কারপন্থীদের মধ্যে; তেমনি দূরত্ব বেড়েছে রক্ষণশীলদের সাথে। ফ্রান্সিসের পরে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের দ্বারা যৌন হয়রানি বন্ধে সাহায্য করবেন, প্রগতিশীল পোপের এমন উত্তরসূরি চান অনুসারীরা।

২০১৯ সালে বার্তা সংস্থা এপির অনুসন্ধানে ক্যাথলিক চার্চে শিশুদের যৌন নিগ্রহের ভয়াবহ চিত্র চমকে দিয়েছিল বিশ্বকে। বেরিয়ে এসেছিল পাঁচ হাজারের বেশি ধর্মযাজকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য। যাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজারের বেশি যাজক তখনও বেঁচে, হয়নি কোনো বিচার এবং তখনও কাজ করছেন শিক্ষক, প্রশিক্ষক হিসেবে; বাস করেন শিশুদের খেলার মাঠের আশপাশে।

সারা বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীর ধর্মগুরু ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম প্রধান ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর আবারও সরব যৌন নিগ্রহের ভুক্তভোগীরা। আহ্বান জানাচ্ছেন, ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচনে, ধর্মযাজকদের দ্বারা যৌন হয়রানি বন্ধে উদ্যোগ নেবেন এবং কঠোর হবেন, এমন কাউকে বাছাইয়ের। প্রগতিশীল ছিলেন বলে পোপ ফ্রান্সিসের অধীনে বিশ্বজুড়ে ধর্ম নির্বিশেষে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে রোমান ক্যাথলিক চার্চের। যাজকীয় ও রাজনৈতিক-দু'দিক থেকেই ক্যাথলিক গির্জা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও সংস্কার এনেছিলেন ফ্রান্সিস।

ইতালির ক্যাথলিক লেখক ও কলামিস্ট ফাদার টম রিজি বলেন, ‘চার্চকে অনেক দিক থেকে সত্যিকার অর্থে বদলে দিয়েছেন ফ্রান্সিস। পোপের যে আদল, সেটাই পুরোপুরি উল্টে দিয়েছেন তিনি। যাজকীয় চর্চা আর জনকল্যাণমূলক নীতির প্রশ্নে গির্জার অগ্রাধিকার পাল্টেছেন। আলোচনা আর বিতর্কের জন্য চার্চকে উন্মুক্ত করেছেন। আগে চার্চে যেসব চর্চা চলতো, সেগুলোতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন।’

আরো পড়ুন:

যিশু খ্রিস্টের শিক্ষা অক্ষুণ্ণ রেখে জীবনধারা আর বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তামাম বিশ্বে রোমান ক্যাথলিক চার্চের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য সমাদৃত পোপ ফ্রান্সিস। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হয়ে কথা বলতেন, গির্জার পক্ষ থেকে হাসপাতাল খোলার পথিক ছিলেন। সফর করেছেন মিয়ানমার, দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রসহ সংঘাত কবলিত বিভিন্ন দেশ।

২০১৩ সালে পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই ভ্যাটিকানে পরিবর্তনের আবহ আনছিলেন। বিশ্বাসীদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা, সারল্যে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবর্তন এনেছিলেন চার্চের ব্যয়বহুল অসংখ্য রীতিতে। তার এই প্রগতিশীলতাই আবার ফাটল ধরিয়েছে চার্চের ভেতরে।

ক্যাথলিকদের পবিত্র ভূমি ভ্যাটিকানের উচ্চপর্যায়ে নারীদের অন্তর্ভুক্তি, সমকামী জনগোষ্ঠীকে সমাজ থেকে বিতাড়িত না করার মতো বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলে আখ্যায়িত হয়েছিলেন ঝামেলার লোক হিসেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংস্কারপন্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তার বিপরীতে দূরত্ব বেড়েছে রক্ষণশীলদের সাথে।

ইতালির ক্যাথলিক লেখক ও কলামিস্ট এডওয়ার্ড পেনটিন বলেন, ‘বিভক্তির তৈরি করা চরিত্র হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে ইতিহাসে। বিভেদ সৃষ্টিকারী পোপ ছিলেন তিনি। সবাই সমর্থন দেবে, এমন কিছু করার খুব কমই চেষ্টা ছিল তার। রক্ষণশীলদের তিনি একেবারেই আলাদা করে দিয়েছিলেন।’

সমাজে সব ধরনের মানুষের অন্তর্ভুক্তি আর সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তীব্র বিভক্তি মোকাবিলা করতে হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসকে। অনেকে তার এসব পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও বাকিরা বিষয়গুলোকে দেখেছেন বর্ষপুরোনো ঐতিহ্য আর রীতি থেকে বিচ্ছিন্নতা হিসেবে।

তার মৃত্যুর পর কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের পরবর্তী প্রধান ধর্মযাজক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকার মধ্যেই, ফ্রান্সিসের প্রগতিশীলতার ধারাবাহিকতা রক্ষা, নাকি আরও মধ্যপন্থি কাউকে বাছাই করা উচিত, সে প্রশ্নে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিভক্তি।

পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কার্ডিনাল পদে যাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন ফ্রান্সিস, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, তার উত্তরসূরি হবেন তার মতোই নন-ইউরোপিয়ান, প্রগতিশীল এবং গির্জার কট্টরপন্থীদের বিরোধী।

সেজু