আজ (রোববার, ৪ মে) সকাল সকাল এই ক্যাফেতে প্রাতরাশ সারতে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। দেখা করেছেন সমর্থকদের সঙ্গে, উপভোগ করেছেন কফিও।
অস্ট্রেলিয়ায় এবারের ফেডারেল নির্বাচনে ৬৩ শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা গেছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ১৫০টির মধ্যে ৮৫ আসনে জয়ী হয়েছে আলবানিজের দল লেবার পার্টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিল ৭৬টি আসন। বিপরীতে লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টির জোট পেয়েছে মাত্র ৩৪টি আসন। গ্রিন পার্টি কোনো আসন না পেলেও স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ৯টি আসনে।
অথচ, গেলবার প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ১টি বেশি আসন জিতে ৭৭ জন আইনপ্রণেতা নিয়ে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আদায় করেছিল আলবানিজ প্রশাসন। ফলে, এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির এই উত্থান নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে দেশটির রাজনীতিতে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লেবার পার্টি ও আলবানিজের জয়ে ভোটাররা সন্তুষ্ট হলেও, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একটি নির্বাচন দেখে হতাশ অস্ট্রেলিয়াবাসী।
নয়া প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ তালিকার শুরুতেই আছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। আত্মবিশ্বাসী জয়ে পর আলবানিজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
লেবার পার্টির জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। তবে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অ্যান্থনি আলবানিজকে শুভেচ্ছা জানালেও কোনো বার্তা দেননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় জীবনযাত্রার ব্যয়, জনস্বাস্থ্য, আবাসন ও জ্বালানির তো অর্থনৈতিক ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রার্থীরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়েও ভাবতে হয়েছে অস্ট্রেলীয়দের। হারের পর প্রধান বিরোধী দল লিবারেল পার্টির পিটার ডুটন স্বীকার করেছেন জনগণের কাছে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছাতে পারেনি তার দল। আর শুরু থেকেই অ্যান্থনি আলবানিজ বলে আসছেন দেশের মানুষ স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য বন্দোবস্ত দেখতে চায়।
অস্ট্রেলিয়ার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ‘দেশের জনগণ অস্ট্রেলিয়ার মূল্যবোধের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সবার জন্য সমান সুযোগ, অধিকার ও ন্যায্যতার দাবিতে তারা এক হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী চলামান অনিশ্চয়তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ানরা দৃঢ় সংকল্প বেছে নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ানরা নিজস্ব সক্ষমতায় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একসাথে আমরা ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে যাচ্ছি।’
লিবারেল পার্টির প্রধান পিটার ডুটন বলেন, ‘আমরা প্রচারণার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। এর দায়ভার সম্পূর্ণ আমার। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এই জয় লেবার পার্টির জন্য ঐতিহাসিক।’
লিবারেল পার্টির ভরাডুবির জলজ্যান্ত উদাহরণ খোদ দলের প্রধান। নিজ আসন ডিকসনে হেরে রীতিমতো ইতিহাস গড়েছেন পিটার ডুটন। বিবিসি নিশ্চিত করেছে, ২০০৭ সালের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রধান নিজ আসনে পরাজিত হলেন। গেল ২৪ বছর ডিকসনের এই আসনে ডুটন পরাজিত হননি।