১৯৭৮ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ওকালানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি- পিকেকে। এরপর ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু করে চার দশকে অসংখ্যবার তুরস্কের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছে গোষ্ঠীটি। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে বিদ্রোহ শুরু হলেও গেল কয়েক বছরে, তুরস্কের সাথে থেকেই বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে লড়ছিল গোষ্ঠীটি।
১৯৯৯ সাল থেকে কারাবন্দি নেতা ওকালান গেলো ফেব্রুয়ারিতে যোদ্ধাদের অস্ত্রসমর্পণের ডাক দিয়ে সংগঠন বিলুপ্ত করার আহ্বান জানালে গেলো মার্চ মাসেই তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে পিকেকে। এরপর সোমবার গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে সংগঠন বিলোপ ও অস্ত্রসমর্পণের মাধ্যমে বিদ্রোহে ইতি টানার ঘোষণাও আসে।
গোষ্ঠীটির সাথে সম্পৃক্ত বার্তা সংস্থা ফিরাত জানায়, ঐতিহাসিক এ পদক্ষেপ আঙ্কারার সাথে নতুন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের অংশ। লক্ষ্য ৪০ বছরের বেশি সময়ের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে আনুষ্ঠানিক ইতি টানা। পিকেকে জানায়, কারাবন্দি নেতা আব্দুল্লাহ ওকালানের নেতৃত্বেই সংগঠন বিলোপের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং ইতি টানা হবে পিকেকে নামের অধীনে পরিচালিত সব ধরনের কর্মকাণ্ডে।
এর আগে গেল শুক্রবার ইরাকের উত্তরাঞ্চলে পিকেকের দলীয় কংগ্রেসে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কথা জানানো হয়। যা কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাশ করার কথা বলা হয়। জানা গেছে, শান্তি আলোচনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করাসহ সংগঠন বিলোপে কিছু শর্তও বেঁধে দিতে পারে পিকেকে। যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি তুরস্ক।
তুর্কি সেনাবাহিনীর আগ্রাসী অভিযানে যোদ্ধারা ইরাকের পার্বত্য অঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে পড়ায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পিকেকে। সংগঠন বিলোপের পর পিকেকে যোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন করা হতে পারে তাদের।
১৯৮৪ সাল থেকে নিষিদ্ধঘোষিত পিকেকে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত। তুরস্কের সাড়ে আট কোটি জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কুর্দি জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে গোষ্ঠীটি। এতে ৪০ বছরে প্রাণ গেছে ৪০ হাজার মানুষের।
সিরিয়ায় পাঁচ দশকের স্বৈরাচারী আসাদ সরকারের পতন ও নতুন সরকার গঠন, ইসরাইলের চোরাগোপ্তা হামলায় লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর মুখ থুবড়ে পড়া, গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধসহ আঞ্চলিক রাজনীতিতে একের পর এক নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্যেই এলো পিকেকে বিলুপ্তির ঘোষণা।