হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সাময়িক স্থগিত

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
বিদেশে এখন
0

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছেন বোস্টন ফেডারেল কোর্ট। যদিও এর বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এদিকে হার্ভার্ডের আর্থিক নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের সক্ষমতার ওপর আঙুল তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

দুইদিনের চড়াই উতরাই শেষে হার্ভার্ডের প্রায় ৭ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিরলো স্বস্তি। কারণ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছেন বোস্টন ফেডারেল কোর্ট।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছাড়া প্রায় ৪০০ বছর পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবে না। দাবির সঙ্গে সম্মতি জানান ডিস্ট্রিক্ট বিচারক অ্যালিসন বুরোস। তিনি বলেন, এমন পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শিক্ষার্থীরা।

বিচারককে অনির্বাচিত উল্লেখ করে রুলের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এদিকে হার্ভার্ডের আর্থিক নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি আঙুল তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের সক্ষমতার ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা জানেন, সরকার হার্ভাডকে কয়েকশ কোটি ডলার দিয়েছে। এটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। তারা আবার উপহার হিসেবে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকার কোটি ডলার দিচ্ছে, আবার শিক্ষার্থীদের ঋণও পরিশোধ করছে। তাই হার্ভার্ডসহ বাকিদের এই পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।’

সাময়িক স্বস্তির মধ্যেও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। যদিও নিজ দেশের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন ও জার্মানি। বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আঘাত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক সার্বভৌমত্বে হুমকি তৈরি করবে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস | ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বন্দ্ব চলছে। তবে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের যেভাবে আগলে রেখেছে, তাতে কিছুটা সুরক্ষিত বোধ করছি।’

আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময় চীনকে চাপে ফেলতে তাদের নীতি প্রণয়ন করে। এবারও একই বিষয় দেখতে পেলাম। খুবই উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছি।’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুইপক্ষের জন্যই লাভজনক। শিক্ষাখাতকে রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে বেইজিং সবসময়ই সরব। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে কাজ চালিয়ে যাবো।’

জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান ওয়াগনার বলেন, ‘হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত জার্মান শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে জার্মান সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

দ্যা সোয়াস চায়না ইন্সটিটিউটের পরিচালক স্টিভ স্যাং বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রহণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন অ্যাকাডেমিক সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার ওপর বড় আঘাত। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থায়ন প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাবও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।’

জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে হার্ভার্ডের ২৩০ কোটি ডলারের তহবিল আটকে দেয়ার পাশাপাশি করমুক্তি সুবিধা বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়ন করছে ৬ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশ।

সেজু