৩৬ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত পুড়িয়ে বীভৎসতার নতুন নজির স্থাপন ইসরাইলের

গাজার হাসপাতালে ইসরাইলের হামলা
বিদেশে এখন
0

নারী-শিশুসহ ৩৬ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার মাধ্যমে বীভৎসতার নতুন নজির স্থাপন করলো ইসরাইল। দেড় বছরের আগ্রাসনে গাজার ৭৭ শতাংশ অঞ্চলের দখল নিয়েছে দখলদার বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্রবিরতি কার্যকর ও দ্বিপাক্ষিক সমাধান নিশ্চিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের তাগিদ আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলো বৈঠক।

দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের মধ্যেই হেঁটে বেড়াচ্ছিল শিশুটি। বাঁচার কি চেষ্টা করেছিল? জানান উপায় নেই। অবরুদ্ধ গাজা ২৩ লাখ বাসিন্দার জীবন আর ইসরাইলি বীভৎসতার জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি এ দৃশ্য।

উপত্যকার ফাহমি আল-জিরজাওয়ি স্কুল লক্ষ্য করে ইসরাইলি দখলদারদের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পর ছোট্ট ফিলিস্তিনি মেয়েটিকে আগুনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলি বোমাবর্ষণ থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত বেসামরিক বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থল ছিল গাজা সিটির দারাজ এলাকার স্কুলটি।

সোমবারের এ হামলায় নারী-শিশুসহ প্রাণ যায় অন্তত ২৫ জনের। চিকিৎসকরা জানান, জীবন্ত পুড়ে নির্মম মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে অনেককে।

একজন বলেন, ‘আজ রাতে যে হত্যাযজ্ঞ, যে গণহত্যা ইসরাইলি দখলদার বাহিনী চালালো, স্কুলের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা শিশু আর নারীদের ওপর, এই অবস্থা ভাষায় অবর্ণনীয়। স্কুলের ভেতরেই পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে দেহগুলো।’

দেড় বছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪ হাজারে। নিখোঁজ আরও ১১ হাজার। এর মধ্যেই উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহে অবরোধ দিয়ে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের অনাহার আর দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে গেলো সপ্তাহে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। উপত্যকার শাসকদল হামাস জানিয়েছে, স্থল অভিযান, বোমা হামলা আর এলাকা খালি করার নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে এরই মধ্যে ৭৭ শতাংশ অঞ্চলের দখল নিয়েছেন নেতানিয়াহু।

এমন পরিস্থিতিতেই গাজা ইস্যুতে ইসরাইলের সাথে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর এবার দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানালো স্পেন। রাজধানী মাদ্রিদে রোববার আরব ও ইউরোপীয় ২০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দিয়ে আহ্বান জানান ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটের দ্বিপাক্ষিক সমাধান নিশ্চিতের।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারিজ বলেন, ‘আমাদের সবার একযোগে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। ইসরাইলকে আর অস্ত্র দেয়া যাবে না। মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে সবশেষ প্রয়োজন হলো অস্ত্র। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান যারা চায় না, সেসব ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞার তালিকা খতিয়ে দেখতে হবে।’

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আব্দেলাত্তি বলেন, ‘ইসরাইলের দিক থেকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে। এটাই মূল সমস্যা। কিন্তু আমরা চেষ্টা অব্যাহত রাখছি। সর্বোচ্চ চাপ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা হবে। অস্ত্রবিরতি কার্যকর করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’

ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, ‘আমরা গাজায় অস্ত্রবিরতি চাই। যত দ্রুত সম্ভব দখলদারিত্বের অবসান চাই। ফিলিস্তিন আর ইসরাইলের সহাবস্থানমূলক শান্তির দিকে এগোতে চাই যতো দ্রুত সম্ভব।’

ইসরাইলের ওপর বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ তীব্রতর হতে থাকার মধ্যেই দেশটিতে সফর করছেন ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। রোববার জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে ইহুদিদের পবিত্র ওয়েস্টার্ন ওয়াল পরিদর্শনের পর নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকও করেন তিনি।

এএইচ