আয়ারল্যান্ডে শিশুদের গোপণ গণকবরের সন্ধান, খনন শুরু

গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর চলছে তদন্ত
বিদেশে এখন
3

আয়ারল্যান্ডের উদ্ধার হওয়া শিশুর গোপন গণকবরের খননকাজ শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে। দেশটির টুয়াম শহরের একটি মাতৃসদনের সেপটিক ট্যাংকে ২০১৪ সালে সন্ধান মিলে ৮ শতাধিক শিশুর দেহাবশেষ। যেখানে ঠাই হয় নবজাতক থেকে শুরু করে তিন বছর বয়সী সব শিশুর। মূলত ১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বিয়ে ব্যতীত জন্মানো হাজারো শিশুদের আলাদা করে এই মাতৃসদনে রাখা হতো।

আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি গলওয়ের ছোট্ট শহর টুয়াম। যেখানে একটি মাতৃসদনের পাশে শিশুদের খেলার মাঠের নিচে চাপা পড়ে আছে এক নিষ্ঠুর ইতিহাস। পুরনো সেই মাতৃসদনের একটি সেপটিক ট্যাংকে গণকবর দেয়া হয় ৮ শতাধিক শিশুকে। যাদের মৃত্যুর রেকর্ড থাকলেও, নেই কোন সমাধিফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ। কালের পরিক্রমায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা এতো বছর চাপা পড়ে ছিল।

২০১৪ সালে ইতিহাসবিদ ক্যাথরিন কর্লেস প্রথমবারের মতো এই গণকবরের অস্তিত্ব জনসমক্ষে আনেন। তার গবেষণায় ধীর ধীরে উঠে আসে শত শত নিখোঁজ শিশুর গোপনে কবর দেয়ার ভয়াবহ চিত্র।

৭০ এর দশকে মাতৃসদনটি ভেঙে ফেলার পর একটি স্ল্যাবের নিচে খোলা গর্তে অসংখ্য হাড় পাওয়া যায়। প্রথমে ধারণা ছিল, এসব মরদেহ ১৮৪০ সালের দুর্ভিক্ষে মৃতদের দেহাবশেষ। পরে পুরানো কাগজপত্র ঘেঁটে আবিষ্কার করেন ৭৯৬ শিশুর মৃত্যুর নথি।

যদিও এসব শিশুকে সমাহিত করার কোনো রেকর্ড নেই। এরপরই সন্ধান মেলে সেপটিক ট্যাঙ্কের নিচের গণকবরের। ২০১৭ সালে আইরিশ সরকারও প্রাথমিক খননে মানুষের দেহাবশেষের সন্ধানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

১৯২৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত এই স্থানে ছিল সেন্ট মেরিজ মাদার অ্যান্ড বেবি হোম। মূলত অবিবাহিত গর্ভবতী নারী ও তাদের ভূমিষ্ঠ সন্তানদের এখানে রাখা হতো। অনুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন আয়ারল্যান্ডের কঠোর সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে অবিবাহিত গর্ভবতী নারীদের সমাজ থেকে আলাদা রাখা হতো। নবজাতকদের মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখায় অপুষ্টি, অনাহার ও বিভিন্ন রোগে মারা যায়। পরে তাদের ঠাঁই হয় এই গণকবরে।

বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গণকবরের খননকাজ শুরু হচ্ছে। অন্তত দুই বছর ধরে চলবে এই খননকাজ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চেষ্টা চলছে শিশুদের মরদেহ সনাক্ত করার কাজ।

টুয়াম আশ্রমে খননকাজের প্রধান ড্যানিয়েল ম্যাকসউইনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত একটি জায়গায় দেহাবশেষ আছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। যেটি ভূগর্ভস্থ একটি সেপটিক ট্যাংক। এখানে মানুষের হাড় আছে, আমরা শুধু এটুকুই জানি। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ৫ হাজার বর্গমিটারের পুরো জায়গাটি খনন করা হবে। আর কোনও মরদেহ আছে কিনা তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা চলছে।’

এ আশ্রমে গর্ভবতী নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাদের গর্ভে জন্ম নেয়া এসব শিশুকে মনে করা হতো আবর্জনা। জীবিত বা মৃত সব অবস্থাতেই এসব শিশু ছিল অবহেলিত।

খননকাজে আইরিশদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, স্পেন, ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞরা। এটি খুবই জটিল প্রক্রিয়া। কারণ ছোট ছোট হাড় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তাই ছেলে-মেয়ে আলাদা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সিনিয়র ফরেনসিক কনসালটেন্ট নিয়াম ম্যাককুল্যাগ বলেন, ‘প্রথম পদক্ষেপ হবে দেহাবশেষগুলো একক ব্যক্তিতে পুনরায় সংযুক্ত করার চেষ্টা করা। সেই প্রক্রিয়ায় কঙ্কাল বা হাড়গুলো জোড়া দিয়ে ডিএনএ টেস্টের জন্য প্রোফাইল তৈরির চেষ্টা করা। তারপর আমাদের কাছে থাকা পারিবারিক রেফারেন্সগুলো মিলিয়ে দেখা। তবে এটি খুবই জটিল প্রক্রিয়া।’

বহু বছর পর অবশেষে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে আইরিশ সরকার। এটি শুধু একটি শহরের ইতিহাস নয়, গোটা সমাজব্যবস্থার এক নিষ্ঠুর উদাহরণ। যা এতদিন চাপা ছিল মাটির নিচে।

এএইচ