পানির জন্য অপেক্ষারত গাজাবাসীর ওপর ইসরাইলের হামলা, শিশুসহ নিহত ১০

ইসরাইলি হামলায় গাজার একটি বিধ্বস্ত এলাকা
বিদেশে এখন
0

ক্ষুধার্তদের উপর চালানো হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই এবার পানির জন্য অপেক্ষায় থাকা গাজাবাসীর ওপরও বোমা ফেলে ৬ শিশুসহ ১০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরাইলি বাহিনী। রোববার পুরো গাজায় প্রাণহানি ১০০ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে এক শিশু। আর ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হত্যার শিকার ৮ শতাধিক ফিলিস্তিনি। সব মিলিয়ে ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় মোট প্রাণহানি ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া অবরোধের কারণে ভয়াবহ সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে আশ্বস্ত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে, এবার পানির জন্য লাইনে অপেক্ষায় থাকা তৃষ্ণার্ত শিশুদের উপরও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। রোববার গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে পানি বিতরণ কেন্দ্রে ফেলা ওই বোমায় ৬ শিশুসহ প্রাণ গেছে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির। অনেক আহত শিশুকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করতে করতে দিগ্বিদিক ছুটতে দেখা গেছে অসহায় বাবা-মা ও স্থানীয়দের।

অবরোধের কারণে অন্যান্য সব কিছুর মতো, চিকিৎসা সামগ্রী সংকটে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বলে জানান আল-আওদা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক।

একটি ক্ষেপণাস্ত্র পানি বিতরণ কেন্দ্রে আঘাত হানার পর আহত রোগীদের ভিড় দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আহতদের বেশিরভাগই শিশু এবং নারী। আমরা ৭ শিশুসহ ১৭ রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দিয়েছি। রোগীরা বিভিন্ন যায়গায় আঘাত পেয়েছেন। চিকিৎসা সামগ্রী সংকটে যথাযথ সেবা দেয়া যাচ্ছে না।

নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে পানি বিতরণ কেন্দ্রসহ পুরো গাজা উপত্যকায় চালানো আগ্রাসী হামলায় রোববার শতাধিক নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যার মধ্যে ছিল খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ২৮ ক্ষুধার্ত। ২৭ মে মাসে ত্রাণ বিতরণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সমর্থিত জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে হত্যার শিকার হয়েছেন ৮ শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহত ৫ হাজার ২৫০।

এক অধিবাসী জানান, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। ইসরাইলিরা আমাদের বলে নিরাপদ স্থানে চলে যাও। কিন্তু তারা সবখানে আক্রমণ চালায়। কার্যত কোনও এলাকা নিরাপত্তা নেই।

আরেকজন জানান, খাবার নেই। আমরা শাকসবজিও কিনতে পারছি না। কারণ এগুলোর দাম অনেক বেশি। মাংসতো পাওয়াই যায় না। আমার ছেলের পোড়া ক্ষত সারাতে যে পুষ্টির প্রয়োজন, সেই চাহিদা মেটাতে পারছি না। ওষুধও ঠিক মতো পাওয়া যায় না।

এরমধ্যেই গাজার শিশুদের নিয়ে বড় দুঃসংবাদ দিলো জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানিয়েছে, রোববার অপুষ্টিতে ভুগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে সাত মাস বয়সী এক শিশু। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৭ শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে।

এছাড়া জুন মাসে খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৫ হাজার ৮শ' ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। ইসরাইলি অবরোধে জ্বালানির সংকটে হাসপাতাল, পানি ব্যবস্থা, স্যানিটেশন নেটওয়ার্ক এবং অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হচ্ছে বলেও সতর্ক করেছে ইউনিসেফসহ জাতিসংঘের আরও সাতটি সংস্থা।

ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, ‘গাজায় এমন অনেক শিশু আছে যারা তাদের বাড়িতে ভয়াবহ আক্রমণ থেকে বেঁচে গেছে। কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ব্যথানাশক নেই। সব অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘আমরা নৃশংস অপরাধ সংঘটিত হতে দেখছি। আরও নৃশংস অপরাধ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’

ইসরাইলি অবরোধ গাজায় চলমান চরম সংকট কিছুটা হলেও দূর করার লক্ষ্যে, ইতালির সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করেছে আরও একটি ত্রাণবাহী জাহাজ। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন- পরিচালিত 'হান্দালা' নামের ওই জাহাজটিতে রয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার, শিশুদের সরঞ্জাম এবং ওষুধ।

এদিকে ভয়াবহ এ সংকটের মধ্যেও কয়েক সপ্তাহ ধরে শুধু ৬০ দিনে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালের ফাঁকেও সাংবাদিকদের জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গাজা নিয়ে কথা বলছি। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা এটি সমাধান করব। দেখা যাক কী হয়।’

যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে চলতি বছরের ১৮ মার্চ পুনরায় আগ্রাসন শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭,৪৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আহত প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট প্রাণহানি ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি ও ৫০ জিম্মি ফিরিয়ে আনার দাবিও জোরালো হচ্ছে ইসরাইলে। রোববার জেরুজালেমে থাকা নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন ইসরাইলিরা।

এএইচ