ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের টোবিয়াস ক্লাব। প্রবীণদের যেন এক মিলনমেলা। জীবনের এই সময়ে প্রতিদিন এই ক্লাবে ভিড় জমান ষাটোর্ধ অনেক নারী পুরুষ। যেখানে নেচে গেয়ে সঙ্গীতে ফিরে যান হারানো আপন ভুবনে।
৯৩ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলা গ্রেটেরল। ছয় সন্তানের মধ্যে তিনজনই থাকেন ভিনদেশে। পরিবারের সদস্যরা দূরে থাকলেও একটু সময় কাটানোর জন্য বেছে নিয়েছেন এই ক্লাব। যেখানে অনেকের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সখ্যতা। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার নিঃসঙ্গতা কাটাতে চলে আসেন টোবিয়াস ক্লাবে। এ বৃদ্ধা জানান, সঙ্গী ও নাচের মধ্যে তিনি খুঁজে ফেরেন আপন ভুবন।
তিনি বলেন, ‘আমি বাথরুমেও নাচ করি। সকালে, যখন আমি ঘুম থেকে উঠি, তখন আমি রেডিও চালু করি এবং গান গাই এবং নাচ করি। আমার পা কেবল নিজেরাই চলতে শুরু করে। সঙ্গীত আমাকে আকর্ষণ করে। টোবিয়াস ক্লাবকে ধন্যবাদ, আমি আমার জীবনের এই মুহূর্তে সেরা সময় ফিরে পেয়েছি।’
গ্রেটেরলের সাথে সব সময় আনন্দ উপভোগে যোগ দেন ৯০ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক জুয়ান ফুয়েন্তেস। দুইজনের সংসারে তার মেয়ে থাকেন ইউরোপে। তাই সময় কাটাতে বেছে নিয়েছেন এই ক্লাব। যেখানে তিনি তার প্রিয় গানগুলি অনুশীলন করেন। শুধু অ্যাঞ্জেলা ও জুয়ান নয় একাকীত্ব দূর করতে এই ক্লাবে আসেন অনেক বৃদ্ধও। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা জানান, প্রবীণদের প্রাণবন্ত সময় উপহার দেয়াই তাদের লক্ষ্য।
ক্লাবে আসা একজন বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন ভেঙেছে। এভাবেই বেঁচে আছি। কিছু স্বপ্ন দেখেছিলাম তারপর সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে, যেমন গানে বলা হয়েছে, প্রতিরোধ করুন, প্রতিরোধ করুন।’
ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমরা সাড়ে তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৫টি ক্লাব খুলেছি। ভেনিজুয়েলার অভিবাসনের ফলে, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক একা হয়ে পড়েছে। আমাদের বয়স্কদের সাহায্য করা এবং তাদের কীভাবে বাইরে বেরোতে হয় তা শেখাতে হবে। আমরা এখানে কী করি? এখানে আমরা নাচ করি, গান করি, কথা বলি, জীবন উদযাপন করি। বয়স্কদের শেখাই কেউ একা নয়, আপনি ভালোভাবে বাঁচুন।’
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ভেনিজুয়েলায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে ভেনিজুয়েলা থেকে দেশত্যাগ করেছেন প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। যার ফলে অনেকটাই একা জীবন যাপন বেছে নিয়েছেন প্রবীণ জনগোষ্ঠী।