গ্রিক পুরাণে রয়েছে ঘুমের এক দেবতা, নাম তার হিপনোস। শান্তির নিদ্রা চেয়ে তার কাছে ঘুমকাতুরদের প্রার্থনা। কারণ ঘুমটা যে বড্ড বেশি জরুরি। শরীরের ক্লান্তি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় ঘুম হলেও এর রয়েছে হরেক রকমের প্রকারভেদ ও আলাদা কিছু ধরন।
কিছু মানুষ আছে হুটহাট করে দাঁড়ানো অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে। এটিকে বলা হয় নারকোলেপসি। এটি একটি স্নায়ুরোগ, যা মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হঠাৎ করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়। নিদ্রাহীনতার চরম একটি পর্যায়ে পৌঁছালেই এমনটা ঘটে।
স্লিপওয়াকিং মানে হলো ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটা কিংবা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় সমনাম্বুলিজম। এটিও একটি শারীরিক অসুস্থতা। ছোট-বড় সবাই এতে আক্রান্ত হতে পারে। ক্লান্তি, মানসিক অস্থিরতা কিংবা জেনেটিক কারণে এমনটি হয়। অন্যদিকে ঘুমের মধ্যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়াও যথেষ্ট বিপজ্জনক।
যত ঘুম তত টাকা। ঘুমকাতুরে লোকদের জন্য এমন একটি চাকরির সুযোগ রয়েছে। তাদের মোটা অঙ্কের বেতনও দেয়া হয়। এটিকে বলা হয় স্লিপ ইন্টার্নশিপ। যেখানে ১০০ দিন ৯ ঘণ্টা করে ঘুমাতে হয়। মূলত কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মান পরীক্ষা বা ঘুমের উপর গবেষণার জন্য এই ধরনের চাকরি দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দারা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় কম ঘুমায়। তাদের গড় ঘুম ৬ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। দেশটির মানুষ কর্মব্যস্ততায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারে না। এই কারণে দেশটিতে ঘুমের অভাব একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এমনকি মানুষকে ঘুম সচেতন করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় পাওয়ার ন্যাপ কনটেস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
অনেকেই দুপুরে খাওয়ার পর কিছুটা ঘুমিয়ে নেন। যা বাংলাদেশে ভাত-ঘুম হিসেবে পরিচিত। যদিও এই ঘুম অনেকের কাছে বদভ্যাস। কিন্তু দশ থেকে বিশ মিনিটের এই ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি হৃদপিণ্ড ও কিডনি ভালো রাখে। সারাদিনের কাজের মধ্যে 'রিফ্রেশ বাটনের' মতো কাজ করে ভাত-ঘুম। ইউরোপের অনেক দেশে এটিকে 'সিয়েস্তা' বা 'পাওয়ার ন্যাপ' বলা হয়। এমনকি ইউরোপের অনেক শহরে সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।
ইনেমুরি জাপানিদের একটি বিশেষ ধরনের ঘুম। যার অর্থ উপস্থিত থাকাকালীন নিদ্রা। যেখানে মানুষ এমন একটি জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ে, যেটি আদোতে ঘুমের জন্য নয়। যেমন রাস্তাঘাট, ডিনার পার্টি, মেট্রোরেল অথবা অফিস। এটিও একটি স্বল্পমাত্রার ঘুম। এর অন্যতম কারণ জাপানের ৪০ শতাংশ মানুষ রাতে ৬ ঘণ্টারও কম ঘুমায়।
নিঝুম রাত আর নিদ্রা এক সূতোতে বাধা। নিশাচরের কাছে রাত উপভোগ্য, তবে রজনীকে কাজে লাগানোর উৎকৃষ্ট উপায়ের নাম ঘুম।