দেখে মনে হবে এ যেনো সত্যিকারের কোনো যুদ্ধের ময়দান। যেখানে অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে নেমেছে একদল শিশু-কিশোর। রণাঙ্গনে শত্রুপক্ষকে মোকাবিলা করার মতোই বালি ও পানিতে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ ও হামাগুড়ির দৃশ্যটি ইউক্রেনের সীমান্ত লাগোয়া রুশ অঞ্চল রোস্তভের।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যেই ডন নদীর তীরে এভাবেই একদল শিশু-কিশোরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে রাশিয়া। রুট মার্চ নামে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শেখানো হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে টিকিয়ে রাখার কৌশল। প্রশিক্ষণের সময় শিশুদের হাতে ছিলো খেলনা অস্ত্র।
এ বয়সে সামরিক প্রশিক্ষণে সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তে দেখা গেছে শিশু-কিশোরদের। সবচেয়ে কম বয়সী অংশগ্রহণকারীর বয়স ছিলো ৮ বছর। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের ইচ্ছাশক্তি কতটা শক্তিশালী তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছে তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি এবং ডামি গুলিও চালিয়েছি। আমাদের প্রশিক্ষণটি দুর্দান্ত ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো প্রায় মারা যাচ্ছি; তবে সব মিলিয়ে উপপভোগও করেছি। ভবিষ্যতে সামরিক পরিষেবার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চাই। দেশের সেবা করতে এবং শেষ পর্যন্ত দেশের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনুগত থাকাই আমার লক্ষ্য।’
শিশু-কিশোরদের এ সামরিক মহড়ায় পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন অভিভাবকরাও।
অভিভাবকরা বলেন, ‘ক্লান্ত হয়ে পড়লেও প্রশিক্ষণ ছাড়তে রাজি হয় না, জিজ্ঞেস করলে চিৎকার করে বলে ওঠে কোনভাবেই প্রশিক্ষণ বাদ দেবে না! তারা সবাই বেশ আগ্রহী।’
আরও পড়ুন:
প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়া রুশ সেনারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আহত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আবার কেউ আছেন শুধু এ মহড়ায় অংশ নিতে বিশেষ ছুটি পেয়ে ছুটে এসেছেন।
প্রশিক্ষক আলেকজান্ডার শপিন বলেন, ‘আমার যুদ্ধ অভিজ্ঞতা শিশুদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আমি পছন্দ করি। এখানে এসে আমি দেখেছি, কিভাবে ধীরে ধীরে সবাই মিলে একটি পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’
এদিকে স্বাধীন শিশু অধিকার সংস্থা নে নরমার’র মতে, তরুণদের সেনাবাহিনীর মতো প্রশিক্ষণ দেয়া, স্কুলে অস্ত্র পরিচালনা এবং সামরিক ড্রোন তৈরি শেখানো এক ধরনের অনুপ্রেরণার অংশ। আর এই প্রশিক্ষণ শিশুদের প্রকৃত দেশপ্রেমিক করে গড়ে তুলবে বলে মনে করছেন রুশ কর্তৃপক্ষ ও প্রশিক্ষকরা।
প্রশিক্ষক ভ্লাদিমির ইয়ানেনকো বলেন, ‘আমরা তাদের নিজের সন্তানের মতো দেখি। এখানে তারা অনেক কিছু শিখেছে। শিশুদের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ ধরণের প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা আড্ডার চেয়ে, সামরিক প্রশিক্ষণে বেশি খুশি।’
রাশিয়ার স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়ায় ৮৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলো। যাদের বয়স ৮-১৭ বছর বয়সের মধ্যে।