গেল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ভারত। আজ (বুধবার, ২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কার্যকর হয়েছে ভারতীয় পণ্যে আরোপ করা ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক।
এই শুল্কারোপের জেরে ভাঙন ধরেছে এক সময় বন্ধু বলে পরিচয় দেয়া দুই রাষ্ট্রপ্রধান নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কে। যার আভাস মিলেছে জার্মান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হচ্ছে, গেল কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হচ্ছে, ৪ বার মোদিকে টেলিফোন করলেও তাতে সাড়া দেননি তিনি। জাপানি সংবাদপত্র নিকেই এশিয়াও একই তথ্য দিয়েছে। তাদের দাবি, ওয়াশিংটনের আচরণে ক্ষুব্ধ হলেও আপাতত কোন প্রতিক্রিয়া না দেখানোর কৌশল নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
যদিও এই ফোনকলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিল সমীকরণ। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি জোট নিয়ে ভাবছিল ওয়াশিংটন।
যেখানে নয়াদিল্লিকে ব্যবহার করে বেইজিংকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা ছিল ট্রাম্পের। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির দাবি, এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে মোদির সঙ্গে ফোনালাপ করতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু শুল্ক নিয়ে অসন্তোষের কারণে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক নিয়ে আপাতত মৌন অবস্থানে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান।
এরমধ্যেই গেল কয়েক সপ্তাহে ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা গেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর, সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনা, এর পরপরই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩ দিনের রাশিয়া সফর, সেখানে যৌথ জ্বালানি প্রকল্প সম্প্রসারণে মস্কো-নয়াদিল্লি আগ্রহ প্রকাশ— এসব ঘটনা প্রবাহ ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধে টিকতে না পেরে, রাশিয়া ও চীনে দিকে ঝুঁকছে নয়াদিল্লি।
ভারতের ওপর দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রধান কারণ ছিল মস্কো থেকে তেল কেনা। এ কারণেই নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াশিংটন। আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা জিইয়ে রাখলেও অর্থনৈতিক ধাক্কা এড়াতে পারবে না ভারত, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
গেল জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৬.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ভারত। ২০২৬ নাগাদ তা ৪৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে।
৩০ শতাংশ পণ্যে শুল্কছাড় আর ৪ শতাংশ পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপের সুযোগ থাকলেও, ৬৬ শতাংশ পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে ভারতকে। অর্থাৎ প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যে আজ থেকেই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হচ্ছে—যার ধাক্কায় সামলাতে ভিন্ন বাণিজ্য অংশীদার নিয়েও ভাবতে হবে নয়াদিল্লিকে।