কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ। মুষলধারে বৃষ্টিতে ফুলে উঠেছে তিনটি প্রধান নদী- রাভি, শতদ্রু ও চেনাবের পানি। ভারত বাঁধ খুলে দেয়ার পর পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এরইমধ্যে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজারের বেশি গ্রাম। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি।
বন্যার পানিতে ভাসছে পাঞ্জাবের বেশিরভাগ অঞ্চল। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। একদিকে বন্যা অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। কোমর সমান পানিতে আশ্রয় শিবিরে ছুটছেন বাসিন্দারা।
পাঞ্জাব প্রদেশের প্রধান নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এক রাতের ব্যবধানে এসব নদীতে পানি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কিউসেক। এতে তলিয়ে গেছে আশেপাশের গোটা অঞ্চল। এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরের বেশিরভাগ অংশ। বন্যার কবলে পড়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ৫০ হাজার গবাদি পশুসহ প্রায় আড়াই লাখ বাসিন্দাকে।
প্রাদেশিক মন্ত্রী ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। বন্যাকবলিত বাসিন্দাদের সহায়তায় সব ধরনের আশ্বাস দেন তিনি।
আরও পড়ুন:
এরইমধ্যে উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবী। বন্যাদুর্গত এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ৭ শতাধিক ত্রাণকেন্দ্র এবং আড়াই শতাধিক চিকিৎসা ক্যাম্প। অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার তাঁবু।
টানা দ্বিতীয় দিনের ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের শেয়ালকোট শহর। তলিয়ে গেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুক্র ও শনিবার বন্ধ রাখা হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, শেয়ালকোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম আরও ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। গেল ২৬ জুন থেকে পাকিস্তানে বৃষ্টি ও বন্যায় মারা গেছে অন্তত ৮১৯ জন। যাদের অর্ধেকের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে আকস্মিক বন্যায়। আহত হাজারের ওপর।
এদিকে, ভারতের ছত্তিশগড়ে প্রবল বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় শতাধিক গবাদি পশুসহ মারা গেছে বেশ কয়েকজন। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০০টি বাড়ি এবং ১৬টি কালভার্ট ও সেতু। টানা তিনদিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভারতের পাঞ্জাব অংশে প্লাবিত হয়েছে ৮ শতাধিক গ্রাম।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। জম্মু-কাশ্মীরে শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। দক্ষিণের তেলেঙ্গানা রাজ্যে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে গঙ্গা ও যমুনা নদীর পানিও বেড়েছে। এছাড়া, হিমাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের পূর্বাভাস দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।