দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আমাল মুসা। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নয়বার বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর পাঁচ মাস আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন খান ইউনিসের এ তরুণী। মা এখনও গাজা উপত্যকায় রয়ে গেলেও, বাবা এবং তিন ভাইবোনের সঙ্গে আবুধাবিতে বসবাসের পাশাপাশি পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
ইসরাইলি বর্বরতার হাত থেকে শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষার কথা চিন্তা করারও উপায় ছিলো না বলে জানান আমাল মুসা। এভাবেই গাজা উপত্যকার শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে চলে গেছে প্রায় দুটি বছর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এখন দ্বাদশ শ্রেণী থেকেই শুরু করতে হচ্ছে আমাল মুসার মত আরও অনেককেই। তাই এ সুযোগ কাজে লাগাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এ শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী আমাল মুসা বলেন, ‘ইসরাইলি আগ্রাসনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আশা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। বেঁচে থাকার জন্য গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলা ছাড়াও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এখানে এসে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছি। যা আমার জীবনে নতুন করে আশার আলো জাগিয়েছে। সব কিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
আরও পড়ুন:
অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একজন চিকিৎসক হওয়া। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করতে চাই। আমি যদি জন্মভূমিতে ফিরতে পারতাম তাহলে খুব ভালো লাগতো। আমি আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্য, স্কুলের বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের কাছে ফিরে যেতে চাই। তাদেরকে আমি অনেক মিস করি।’
আবুধাবির হিউম্যানিটেরিয়ান সিটিতে গড়ে তোলা বিশেষ শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছেন গাজা থেকে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। যেখানে চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। গাজার শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রবেশাধিকার সহজ করার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এমিরেটস হিউম্যানিটেরিয়ান সিটি শিক্ষা প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডায়ানা ওয়ারদেহ বলেন, ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো তাদের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা এবং সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা। দ্বাদশ শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য বৃত্তির সুযোগও রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গাজার শিশু-কিশোরদের শিক্ষার সুযোগ দেয়ার জন্য প্রবেশাধিকার সহজ করা হয়েছে।’
ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার ৩০৭টি স্কুলের মধ্যে ২৯৩টি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত। পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই বড় ধরনের পুনর্বাসন বা সম্পূর্ণ পুনর্গঠন প্রয়োজন বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। নেতানিয়াহু বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ না থামালে যা অসম্ভব।