বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় চালু করছে জাপান

‘কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া’ পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র
বিদেশে এখন
0

ফুকোশিমা ট্র্যাজেডিতে প্রায় ১৫ বছর পর আবারও বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া’ পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে জাপান। প্রাথমিকভাবে আগামী জানুয়ারি মাসে এর একটি চুল্লি সক্রিয় করা হতে পারে। ২০১১ সালের ভয়াবহ ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর দেশটির সামগ্রিক পারমাণু বিদ্যুৎ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জনসাধারণের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর ৫৪টি চুল্লি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এক যুগের বেশি সময় পর আবারও দেখা দিয়েছে দেশটির পারমাণবিক শক্তিতে ফেরার সম্ভাবনা।

চেরনোবিলের পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ছিল ফুকুশিমায়। ২০১১ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা দাইচি কেন্দ্র মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় ৫৪টি পারমাণবিক চুল্লি ও দেশটির সামগ্রিক পারমাণু বিদ্যুৎ কর্মসূচি।

তবে প্রায় ১৫ বছর পর আবারও দেশটির পারমাণবিক শক্তিতে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে জাপান। দেশটির নিগাতা অঞ্চল কর্তৃপক্ষ নতুন করে এটি চালু করতে গ্রিন সিগনাল দিয়েছে।

নিগাতা প্রিফেকচারের বিধানসভা গভর্নর হিদেও হানাজুমির আস্থা ভোটে কার্যত কেন্দ্রটি আবার চালুর করার অনুমতি দেয়া হলো। আমদানি নির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার চেষ্টা হিসেবে জাপান নতুন করে সচল করার উপযোগী ৩৩টি চুল্লির মধ্যে ১৪টি এরই মধ্যে চালু করেছে।

টোকিও থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান। নতুন করে সচল হওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কাশিওয়জাকি-কারিওয়া হবে প্রথম কেন্দ্র।

২০১১ সালে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয়ের পর আশেপাশের এলাকা ছেড়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নিগাতায় আশ্রয় নেন। এখন নতুন করে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা নিয়ে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ভোটের আগে প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারী নিগিতা অ্যাসেম্বলির সামনে জড়ো হন।

আরও পড়ুন:

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের কারণে যারা এরই মধ্যে মানসিক, শারীরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তারা আবারও পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে, এ বিষয়টি নিয়ে আমি সত্যিই আতঙ্কিত।’

কাশিওয়জাকি-কারিওয়া পরিচালনা করবে দেশটির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ পরিষেবা সংস্থা টোকিও ইলেকট্রনিক পাওয়ার কোম্পানি- টেপকো। প্রতিষ্ঠানটি ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও পরিচালনা করতো। এ নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ।

জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নতুন করে চালুর প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ হয়নি। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ টেপকোর হাতে কেন্দ্র পরিচালনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

অবশ টেপকোর মুখপাত্র মাসাকাতসু তাকাতা বলেছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা আর কখনো যেন না ঘটে এবং নিগাতার বাসিন্দারা যেন এমন কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হন, এ বিষয়ে তারা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

টেপকোর মুখপাত্র মাসাকাতসু তাকাতা বলেন, ‘স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতে আমরা বিশ্বাস করি যে কাশিওয়াজাকি-কারিওয়া পুনরায় চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কোম্পানি ফুকুশিমার প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন এবং ফুকুশিমা দাইচির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরণ সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমোদন পাওয়া গেলে আগামী ২০ জানুয়ারি ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাতটি চুল্লির মধ্যে প্রথমটি আবারও চালুর কথা বিবেচনা করছে টেপকো।

এসএইচ