ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০২৪ সালের আগস্টে এসে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার কোন স্থানে সেনা অনুপ্রবেশ করাতে পারে ইউক্রেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্কে এতদিন বেশ ভালোই আধিপত্য ছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর।
কিন্তু উত্তর কোরিয়া থেকে কিম জং উন হাজার হাজার সেনা পাঠানো আর কুরস্কে সেই সেনা মোতায়েনের পর ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যেন পালিয়ে বাঁচতে চাইছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, গেলো ৬ ডিসেম্বর কিমের সেনারা মাত্র দুই ঘণ্টায় কুরস্কের লিওখোভো গ্রামে শত শত ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যা করেছে।
রাশিয়ার প্রশিক্ষণ পেয়ে যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে তারা। মাত্র দুই ঘণ্টার যুদ্ধে পুরো গ্রাম ইউক্রেনের সেনাদের কাছ থেকে দখলে নিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। আরও রোমহর্ষক তথ্য, সেই অভিযানে কাউকে বন্দি করে নেয়া হয়নি।
একরকম হারিকেনের মতো হামলা চালিয়ে সব সেনাদের মেরে ফেলা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, কুরস্কে আরও উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বারবারই রাশিয়াকে আহ্বান জানাচ্ছেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উত্তর কোরিয়ার সেনা সরিয়ে নিতে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আরও তথ্য পেয়েছি। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে অনেক বেশিসংখ্যক উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করেছে। কুরস্কে ইউনিট হয়ে যুদ্ধ করেছ এই সেনারা। এখন এভাবেই চলছে। কিন্তু আমাদের কাছে খবর আছে খুব শিগগিরই অন্য সম্মুখসারিতে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করা হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিম জং উন মস্কোর কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির খোঁজ করছে। পাশাপাশি কিম চাইছেন, তার দেশের সেনারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোক। দক্ষিণ কোরিয়াকে সামরিক সমর্থন দিয়ে উত্তর কোরিয়াকে বারবার উসকে দিলেও পিয়ংইয়ংএর বেপরোয়া পদক্ষেপে বিপাকে পড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। জেলেনস্কি বলছেন, এশিয়াকে আরও অস্থির করতে উঠেপড়ে লেগেছেন পুতিন।
ভলোদিমির জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘রাশিয়া আরেকটা দেশকে টেনে হিচড়ে যুদ্ধের মধ্যে নিয়ে আসছে। এখন যদি একে আগ্রাসনের নাম দেয়া না হয়, কখন দেবেন? পুতিন এই যুদ্ধের পরিধি আর আগ্রাসন বাড়িয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা হলেই তিনি পিছিয়ে যান। এশিয়াকে অস্থির করে বিশ্বে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করাই তার উদ্দেশ্য। এ কারণেই উত্তর কোরিয়াকে আধুনিক যুগের যুদ্ধ শেখাচ্ছেন পুতিন।রাশিয়া আরেকটা দেশকে টেনে হিচড়ে যুদ্ধের মধ্যে নিয়ে আসছে। এখন যদি একে আগ্রাসনের নাম দেয়া না হয়, কখন দেবেন? পুতিন এই যুদ্ধের পরিধি আর আগ্রাসন বাড়িয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা হলেই তিনি পিছিয়ে যান। এশিয়াকে অস্থির করে বিশ্বে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করাই তার উদ্দেশ্য। এ কারণেই উত্তর কোরিয়াকে আধুনিক যুগের যুদ্ধ শেখাচ্ছেন পুতিন।’
কয়েক মাসেই রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সখ্যতা বেশ বেড়েছে। জুনে দুই দেশই প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করে। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি হামলার শিকার হয়, সেনা পাঠিয়ে সাহায্য করবে আরেক দেশ। এরপর ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে রাশিয়ার কুরস্কে পাঠানো হয় ১০ হাজার উত্তর কোরিয় সেনা।
তবে এক সপ্তাহ আগেও যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ছিল কিছুটা ভিন্ন। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের কুরস্ক ওব্লাস্টের চার স্কয়ার মাইল এলাকা রুশ সামরিক যানের কবরস্থান বানিয়ে ফেলেছিলো ইউক্রেন। পশ্চিমা মাইন, আর্টিলারি, ড্রোন আর ট্যাংক দিয়ে রুশ সামরিক বাহিনীর ৯০ টি যান শেষ করে দিয়েছিল ইউক্রেনের সেনারা।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ১৪ হাজার ৫শ' যান ধ্বংস হয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের মাত্র ৫ হাজার ২শ' যান ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু কুরস্কে প্রায় ৯০টি সামরিক যান ধ্বংসকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে রাশিয়া। একসঙ্গে অঞ্চলটির সব যুদ্ধযান ধ্বংসের কারণে মস্কোর বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
কুরস্ক উত্তেজনার মধ্যেই কুরস্ক থেকে দেড়শ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ওরিওল অঞ্চলে জ্বালানি কেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এদিকে, এর আগে একদিনে প্রায় একশ মিসাইল আর দুশ' ড্রোন ইউক্রেনে ছুড়েছে রাশিয়া। বেশিরভাগই পশ্চিমা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ভূপাতিত করার দাবি করেছ কিয়েভ।