চলতি মাসেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকের ভেন্যু হিসেবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট ও তুরস্কের ইস্তাম্বুলের নাম শোনা যাচ্ছে।
বৈঠক যেখানেই হোক না কেন এতে অংশ নিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাই আলোচনায় বসার আগে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা চান তিনি। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা কাঠামোর বিস্তারিত জানতে চান তিনি।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তা বলয় নিয়ে। স্টেট সিকিউরিটি সার্ভিস এসএসও হচ্ছে তার রাষ্ট্রীয় দেহরক্ষী বাহিনী। যারা ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিয়ে রাখেন জেলেনস্কিকে। যারা বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, উন্নতমানের যোগাযোগ যন্ত্র ও অটোমেটিক সব যন্ত্র বহন করে ।
এছাড়াও ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জেলেনস্কির ভ্রমণ, বৈঠক ও জনসমাগমে উপস্থিতির গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে। যেকোনো ধরণের হামলা প্রতিহতে সর্বদা তৎপর থাকেন তারা।
অপরদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নিরাপত্তা তথ্যে চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা। যিনি পশ্চিমাদের একরকম নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। রাশিয়া শাসন করে আসছেন গত ২৫ বছর ধরে । সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির কর্মকর্তা পুতিনের নখদর্পণে রয়েছে আত্মরক্ষার কৌশল। মার্শাল আর্টেও বেশ পারদর্শী তিনি।
আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত থাকলেও নিজেকে বিশ্বের অন্যতম নিরাপত্তা বলয়ে রাখেন ভ্লাদিমির পুতিন। তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী। যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কারোরই এতো শক্তিশালী সিকিউরিটি নেটওয়ার্ক নেই। তবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার নিরাপত্তায় প্রায় ১ লাখ সদস্য নিয়োজিত রেখেছেন।
আরও পড়ুন:
মাস্কেটিয়ার নামে এক দল বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর সুরক্ষা বেড়াজালে থাকেন পুতিন। যারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে জারদের প্রতিরক্ষায় কাজ করতেন। তাদের হাতে সবসময় চেগেট নামে একধরণের বিশেষ ব্রিফকেস দেখা যায়। যা বুলেট আটকাতে সক্ষম।
পুতিনের দেহরক্ষীদেরও প্রচণ্ড শক্তিশালী মনোবল ও যেকোনো প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাজ করার সক্ষমতা থাকতে হয়। পুতিনের যেকোনো স্থানে ভ্রমণের কয়েক মাস আগে থেকেই গন্তব্যস্থলের খোঁজ নিতে শুরু করেন তারা। তাঁদের কাছে থাকে এসআর-ওয়ান ভেক্টর পিস্তল। বুলেটপ্রুফ ভেস্টও ভেদ করতে পারে এই পিস্তলের বুলেট। এই অস্ত্রটি দিয়ে মাস্কেটিয়ারসরা যেকোনো মুহূর্তে হামলাকারীকে ঘায়ের করতে সক্ষম।
দূরে থেকে বোমা বিস্ফোরণ রোধ করার জন্য বসানো হয় জ্যামিং ডিভাইস। দক্ষ প্রযুক্তিবিদরা চালান ইলেকট্রনিক নজরদারি। পুতিনের বহরে থাকে একে-ফোরটি সেভেন, অ্যান্টি-ট্যাংক গ্রেনেড লঞ্চার ও পোর্টেবল অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল।
অরাস মোটরসের তৈরি বিলাসবহুল গাড়ি অরাস সিনেট ব্যবহার করেন পুতিন। লাক্সারি ও নিরাপত্তায় যার জুড়ি নেই।
পুতিনকে বহরকারী বিশেষ বিমানেও মাস্কেটিয়ার্সরাই তাকে নিরাপত্তা দেন। বাইরে থেকে বিমানটি সাদামাটা মনে হলেও এর রয়েছে বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বিমানটিতে রয়েছে ভিআইপি কেবিন, সোফা, শোবার খাটসহ আরও অনেক সুবিধা।
শুধু বহনকারী বিমান কিংবা গাড়ি নয় পুতিনের খাবারও একাধিক নিরাপত্তার ছাঁকনি পেরিয়ে টেবিলে আসে। যেকোনো খাবার শুরুতে তার বডি-গার্ডরা মুখে নিয়ে পরীক্ষা করেন। পরে তাকে পরিবেশনের জন্য দেয়া হয়।
মাস্কেটিয়ার্সদের হাতে চেগিট ছাড়াও পু স্যুটকেস নামে বিশেষ এক ধরণের স্যুটকেস থাকে। দেশের বাইরে সফরের সময় এই স্যুটকেসে করে পুতিনের মল-মূত্র মস্কোতে ফিরিয়ে আনা হয়। যাতে করে রুশ প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অজানা তথ্য প্রকাশ না পেয়ে যায়।