ইসরাইলের আগ্রাসনে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নগরীতে প্রায় ৭ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ। যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশু।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা গাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিলেও হামলা চলে সেখানে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, উপত্যকার ৭৩ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে দখলদাররা। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই ব্যবহার হচ্ছিলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি প্রায় ৩০০ শিক্ষাকর্মী নিহত হওয়ায় বন্ধ পাঠদান কার্যক্রম।
তবে এতো কিছুর পরও গাজার খান ইউনিসে তাঁবুর মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে পাঠশালা। মৃত্যু ঝুঁকিকে মাথায় নিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁবুর ভেতর আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে ক্লাসরুম। যেখানে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে পাঠদান চলছে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের।
এক শিক্ষার্থী বলেন, যুদ্ধের কারণে আমার পড়াশোনা বন্ধ ছিলো। তাই তাঁবুর মধ্যে পড়াশোনা করতে এসেছি। তাঁবুতে ক্লাস করা আমার জন্য সমস্যা নয়। কারণ জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা সামনে আসবো।
খান ইউনিসের এই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধের জন্য শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা যাবে না। তাই নিজেরাই তাঁবুর মধ্যে তৈরি করেন পাঠশালা। যেখানে স্কুলের মতোই চলছে পাঠ কার্যক্রম।
তাঁবু পাঠশালার প্রধান শিক্ষক লাইলা ওয়াফি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। যুদ্ধকে শিক্ষা বন্ধের অযুহাত হতে দেয়া যাবে না। আমরা সারাজীবন যুদ্ধের মধ্যেই কাটিয়েছি। তবে শিশুদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।'
যুদ্ধের মধ্যে পাঠশালায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়াকে কীভাবে দেখবেন অভিভাবকরা, এ নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন শিক্ষকেরা। তবে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ক্লাসে ফিরে যাবার জন্য শিক্ষার্থীরাও ছিলো ব্যাকুল। তাই কানায় কানায় পূর্ণ তাঁবুর এই পাঠশালা।
শিক্ষকরা বলেন, 'শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে পাঠদান শুরুর বিষয়ে আগ্রহ ছিলো। বাচ্চারা ক্লাসে ফিরতে পেরে খুবই খুশি। এ কারণে আমরাও পাঠদান চালিয়ে যেতে পারছি। প্রায় ৭ মাস ধরে শিশুরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত ছিলো। এটা আমাদের ব্যর্থতা। চালুর পর পাঠশালা শিক্ষার্থী দিয়ে পরিপূর্ণ। এখানে সবাইকে জায়গাই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।'
সব সংকট মোকাবিলা করেই যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য কাজ করে যেতে চান পাঠশালার শিক্ষকরা।