ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মানুষের লাশের মিছিল আর আকস্মিক রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় হতবাক সিরিয়া।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। উপকূলীয় শহর জাবলেহে এক ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করার সময় হামলার শিকার হয় সরকারি বাহিনী। হামলা চালায় ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সমর্থকরা। এরপরই গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সংঘাত, যা শুক্রবারও অব্যাহত। পাঁচ দশকের বেশি সময় দেশ শাসন করা আসাদ পরিবারের দুর্গ হিসেবে পরিচিত আলাউইত গোষ্ঠীর শক্ত ঘাঁটি খ্যাত উত্তরপূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে হোমস, আলেপ্পো, এমনকি রাজধানী দামেস্ক পর্যন্ত।
স্থানীয় একজন বলেন, 'আলেপ্পো থেকে সিরীয় উপকূলের দিকে যাচ্ছি আমাদের ভাইদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে। যারাই আইন ভাঙতে চাইবে, শক্ত হাতে তাদের দমন করা হবে।'
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য, হামলা-পাল্টা হামলার প্রথম দু'দিনেই প্রাণ গেছে নারী-শিশুসহ সাড়ে ৩শ' মানুষের। নিহতদের মধ্যে আসাদের অনুসারী এবং সরকারি বাহিনীর সেনার পাশাপাশি আছে অনেক সাধারণ মানুষও। উপকূলীয় অঞ্চলে সেনাবাহিনীর কার্যালয়, নিরাপত্তা চৌকি আর সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করেও গুলি চালাচ্ছে পতিত সরকারের সাবেক সেনারা। পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকাতে কারফিউ জারি রয়েছে বন্দরনগরী লাতাকিয়া ও তার্তুজে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'লাতাকিয়ায় আমাদের ভাইদের ওপর হামলা চালাচ্ছে আসাদের ফেলে যাওয়া বাহিনীর অবশিষ্টাংশ। আলেপ্পো থেকে যাচ্ছি তাদের রুখতে।'
বলা হচ্ছে, বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানে আসাদ সরকারের পতন এবং নতুন ইসলামপন্থি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর সবচেয়ে সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছে সিরিয়া। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেন, 'পতিত সরকারের ফেলে যাওয়া টুকরো অংশগুলো, যারা পতন অস্বীকার করে শোষণ-নিপীড়ন, মানবতাবিরোধী অপরাধ অব্যাহত রেখেছে, নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করছে, তাদের খুঁজে বের করবো আমরা। তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছ ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করা হবে। তাদের হাত থেকে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।'
জাবলেহ, উপকূলীয় শহর বানিয়াস, সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের জন্মস্থান কারদাহাসহ নিকটবর্তী আলাউইত গ্রামগুলো বর্তমানে আসাদপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চলছে গোলাগুলি। ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্তপ্রায় সিরিয়ায় নতুন করে এ লড়াই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।