জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যখন রাজসাক্ষী হলেন তখন থেকেই আলোচনার শুরু, কবে তিনি ট্রাইব্যুনালে নিজের দোষ স্বীকার করে শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। অবশেষে আসামির কাঠগড়া থেকে বেরিয়ে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন তিনি।
আজ (মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন জুলাই আন্দোলনের সময়ে পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব থাকা আইজিপি মামুন। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে রাখতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই সময়ের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী।’ পুলিশ বাহিনীতে গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট নিয়েও কথা বলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। লেথাল ওয়েপন ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিলো শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিবি প্রধান হারুন ছিলেন মরণাস্ত্র ব্যবহারে অতি উৎসাহী।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে জুলাই আগষ্টের গণহত্যা হয়। ডিবিপ্রধান হারুনকে জ্বীন বলে ডাকতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার নির্দেশেই বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কদের আটক করে মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং টেলিভিশনে আন্দোলন প্রত্যাহারে বক্তব্যদানে বাধ্য করা হয়।’
সাবেক আইজিপি মামুন জবানবন্দিতে আরও বলেন, র্যাব ১-এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিলো। ভিন্নমতালম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি এমন ব্যক্তিদের মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা আসতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। কখনো কখনো নির্দেশনা দিতেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মত কাজগুলো করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।
আজকের জবানবন্দিতে নিহত, আহত পরিবার ও দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘অপরাধবোধ ও বিবেকের তাড়নায় আমি রাজসাক্ষী হয়েছি।’
এর আগে ২৪ মার্চ মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান তিনি।
এর আগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য, চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মাসেই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা প্রসিকিউশনের।