সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রিতে বিপিসির হাজার কোটি টাকা লোপাটের প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অর্থনীতি , পরিষেবা
আইন ও আদালত
0

সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশনের (বিপিসি) বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা লোপাটের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বছরে ১৪ লাখ এলপিজি সিলিন্ডার গ্রাহক পর্যায়ে সরকারিভাবে সরবরাহ করার কথা বলা হলেও বাজারে এর অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি অভিযানকারী দল। তারা বলছেন, বেসরকারি কোম্পানির বোতলে ভরে এসব সিলিন্ডার ডিলার বিপিসির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামেও একই অভিযোগে অভিযান চালায় দুদক।

কয়েক বছর ধরে দেশে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। তাই বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাইনের গ্যাসের বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে এলপিজি সিলিন্ডার। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে। যা গৃহস্থালি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিল্প এবং পরিবহনখাতে ব্যবহৃত হয়।

২০২১ সাল থেকে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি কার্গো মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এলপিজি সিলিন্ডারে দাম নির্ধারণ করে আসছে। সবশেষ ৪ মে নতুন দর অনুযায়ী ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৪৩১ টাকা। আর সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করে। বাজারে এই দামে বিক্রির কথা থাকলেও ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না।

সরকারি কোম্পানির সিলিন্ডারের সঙ্গে বেসরকারি কোম্পানির দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধেক থাকায় এই গ্যাস বিক্রিতে দুর্নীতির অভিযোগে আজ (মঙ্গলবার, ৬ মে) বিপিসির কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। উঠে আসে ভয়াবহ চিত্র- সাধারণ মানুষের কাছে যে গ্যাস ৮২৫ টাকায় পৌঁছানোর কথা, সেই গ্যাস বেসরকারি কোম্পানির বোতলে ভরে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে অসাধু চক্র।

দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, ‘ভুয়া ডিলার হিসেবে, ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহার করে অথবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা এনপি গ্যাস লিমিটেড থেকে বের করে নিয়ে সে। বা এই চারটা যে ডিস্ট্রিবিউশন প্রতিষ্ঠান আছে তাদের মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসে। নিয়ে সে তারা এগুলোকে ক্রসফেইলিং করে। সরকারি যে বোতল, আমরা সিলিন্ডার যেটা বলি সেখান থেকে বেসরকারি সিলিন্ডারগুলো আছে সেখানের বিভিন্ন ব্যান্ড নেম বা লোগো ব্যবহার করে সেগুলোতে সাপ্লাই করে।’

বিপিসির হিসাবে, প্রতি বছর প্রায় ১৪ লাখ বোতল সিলিন্ডার গ্যাস উৎপাদন করে সরকার। অতিরিক্ত ৭০০ টাকা প্রতি সিলিন্ডারে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যয় হলে প্রতারকদের হাতে চলে যায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। সংস্থাটির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানালেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা।

আমিন উল আহসান বলেন, ‘যেহেতু একটা বড় অভিযোগ এসেছে এবং আমরা দেখছি যে অধিকাংশ লোকই এভাবে জানেন না সেকারণে আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বিপিসি থেকে এবং মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটিও করেছি, প্রথমত এই রিপোর্টিংয়ের উপর একটা তদন্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত আমরা বিপিসি থেকে প্রত্যেক মার্কেটিং কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছি যে, তাদের জেনুইন ডিলার কারা সেটা জানাবে।’

এদিকে অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামেও সরকারি বোতলজাতকারী কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড ও পরিবেশক কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক।

এসএস