চামড়ার উপযুক্ত দাম নিশ্চিতে সংরক্ষণে সহায়তা দেবে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা
দেশে এখন
0

চলতি বছর চামড়ার দাম যতক্ষণ ন্যায্য না হবে, ততক্ষণ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে সহায়তা দেবে সরকার বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ও কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির আহ্বায়ক শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেন, ‘কোরবানির চামড়ার উপর এতিমের হক রয়েছে। এর সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠক করেছি। যেখানে বড় সিদ্ধান্ত হলো, মাদ্রাসা ও এতিম খানায় ৩০ হাজার টন লবণ দেবে সরকার। প্রতিষ্ঠানগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত চামড়ার ন্যায্য দাম না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে।’

আজ (বুধবার, ২১ মে) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একটি নির্দেশনামূলক ভিডিও তৈরি করব। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সেগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগে সারাদেশে একসঙ্গে কাঁচা চামড়া আসতো। চামড়া পচে যাবে, সে কারণে দাম না পেয়েও বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এবার সেটা হবে না।’

আমাদের প্রধান উপদেষ্টা চান, গরিবের হক চামড়ার যেন ন্যায্যমূল্য পায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২২ মে) আবারো বৈঠকে বসবো। তখন চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হবে। এবছর চামড়ার দাম গত বছর থেকে বেশি হবেও জানান তিনি।

‘বৈঠকে আমরা আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নির্ধারিত পশুর হাটের বাইরে পশু বেচাকেনা যেন না হয়। হাসিল ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনার বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া সরবরাহ ও চাহিদা নিয়ে বিষদ আলোচনা করেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘দাম না পেলে আমরা প্রয়োজন হলে সরাসরি কাঁচা চামড়া রপ্তানি করবো।’ এসময় স্থানীয় পর্যায়ে উপযুক্ত দাম পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘সুষ্ঠু বাজার, পরিবহন ও দামে সঠিক বাস্তবায়ন হবে এবার। প্রাণির প্রতি যেন কোনো নৃশংসতা না হয় এবং কোনো ধরনের ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করে প্রাণিকে মোটাতাজা না করা হয়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক) অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘পরিবহনকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি কমিয়ে আনতে পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনগণকে সার্বিক সহায়তায় সচেষ্ট থাকবে। কেন্দ্রীয় সেল গঠন করা হবে এবং হটলাইন নম্বর ও ৯৯৯-এ ফোন করেও অভিযোগ জানালে পুলিশ ও সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এসময় তিনি ৯৯৯ ও হটলাইন নম্বরে ফোন করার সুফল সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, এ বছর কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কোরবানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত ২০ মে।

উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে আছেন ১৭ সদস্য, যার আহ্বায়ক বাণিজ্য উপদেষ্টা। এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, শিল্প সচিব, এনজিও প্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বেসরকারি প্রতিনিধি (সরকার মনোনীত)। কমিটিতে সদস্য সচিব বাণিজ্য সচিব।

কমিটি সঠিকভাবে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং এজন্য পর্যাপ্ত লবণের সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ; চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা এবং কোরবানির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন।

এ ছাড়া চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির স্বার্থ সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান; কোরবানির হাট, পশু পরিবহন এবং পরিবহনের সময় নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধের বিষয়ে নির্দেশনা জারি এবং চামড়া শিল্প নগরী, সাভারসহ সারাদেশে দ্রুত ও যথাযথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এ কমিটি।

এনএইচ