খান আকাশ। আংটির খোজে আজিমপুর থেকে এসেছেন গুলিস্তানে। পাথরের আংটি পড়ার সখ তার বহুদিন থেকে। তিনি বলেন, আমি পাথরের আংটি পড়তে ভালোবাসি। কিন্তু কোনো কাজের জন্য এরকমটা না। আমার পাথরের আংটি পড়তে ভালো লাগে।
দেশের পাথরের আংটির অন্যতম বড় বাজার গুলিস্তানের এই টুইন টাওয়ার মার্কেট এলাকা। এখানে নিচের টংয়ের দোকানেই হচ্ছে লাখ লাখ টাকার আংটির বিকিকিনি।
জ্যোতিষী মুহাম্মদ সেলিম চিশতী বলেন, ‘অল বার্মিজ বিক্রি করেছি। যেটা এখন খুব রেয়ার। পাওয়া যায়না। ২০১৩/১৪ এর দিকে ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আমাদের এখানে নীলা আছে, পোখরাজ আছে, ক্যাটসআই, আঁখি, রুবি এরকম ৩০ থেকে ৪০ ধরনের পাথর আছে।’
কেউ কেউ ৮-১০ লাখ টাকায়ও কিনে নিচ্ছেন পাথরের নানারকম আংটি। কেউ ব্যবহার করছেন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সমাধানের জন্য। কেউবা সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণেই পড়ছেন এসব আংটি।
একজন জানান, এক লাখ টাকা দিয়ে আংটি কিনে পড়েছি। কোনো সমস্যা আমি পাই নাই। জ্যোতিষী মুহাম্মদ সেলিম চিশতী বলেন, ‘ফল না পেলে পৃথিবীর এত মানুষ পাথরের প্রতি দুর্বল হতো না।’
কর ফাঁকি দিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে পাথর। বছরে ঠিক কি পরিমাণ আংটির বেচা বিক্রি হয় সে তথ্যও নেই অ্যাস্ট্রোলজি নিয়ে গবেষণা করা কোনো সংগঠনের কাছে। পাথরের নামে ইমিটেশন বিক্রির ভয়াবহ প্রতারণার কথাও উঠে আসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোলজির এই পরিচালকের কণ্ঠে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোলজির পরিচালক ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এখানে অনেক ইমিটেশন আছে। ইমিটেশনের আড়ালে ন্যাচারাল স্টোন থাকে। ভারতে ট্যাক্সসহ বিক্রি হয় আর এখানে উইদাউট ট্যাক্স। অরিজিনাল পাথরের দাম বেশি। আর বাংলাদেশে এরকম পাথর কতগুলো বিক্রি হবে সে বিষয়ে কেউ জানে না।’
১০০ টাকা থেকে লাখ টাকা দেশ কিংবা দেশের বাইরে থেকে আসা এসব আংটির নেই কোনো মূল্য তালিকা । জ্যোতিষীদের প্রেসক্রিপশনেই চলছে আংটির বাজার। জ্যোতিষীর বাণীর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই বা কতটুকু?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজি বিভাগের পাথর বিশেষজ্ঞ ও প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রভাব বিস্তার করতে পারে। গ্রহ নক্ষত্র এর প্রভাব এগুলোর সাইন্টিফিক পরিচ্ছন্ন কোনো ব্যাখ্যা নাই। আমার জানামতে নাই। তবে মানুষ যখন ফ্রাস্টেটেড হয় তখন কোনো একটা জিনিসের ওপর নির্ভর করলে তার মন অন্যদিকে ডাইভার্ট হয়ে যেতে পারে। মনোজগতের টেনশনের ওপর একটা প্রভাব পড়ে।’
সত্যিই কি সমস্যা সমাধানে কাজে আসে পাথরের এসব আংটি? ইসলামিক স্কলাররা জানালেন ভিত্তি নেই পাথরের বিশেষত্বের। সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণে পড়লেও মূল্য তালিকা নির্ধারণের দাবি তাদের।
কুরআন সুন্নাহ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মাওলানা ফখরুদ্দিন আহমাদ বলেন, পাথরের প্রভাবে মানুষের শারীরিক বা মানসিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে এরকম কোনো ক্ষমতা পাথরের নাই। অবশ্যই এর একটা নির্ধারিত দাম থাকা উচিত বাজার মূল্যায়ন অনুযায়ী।’