বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করতে শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম প্রধান পৈশাচিক অনুষঙ্গ ছিলো গুম। অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গঠন করে গুম কমিশন। গেল বছর ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয় গুম সম্পর্কিত তদন্ত কমিশন।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেড় হাজারের বেশি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ নথিভূক্ত হয়েছে। অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা ও মুক্তি এই ৫টি ভাগে সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল উপায়ে গুমের ঘটানো হয়েছে বলে গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়।
নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা বছরে পর বছর অপেক্ষায় থাকে প্রিয় মানুষের জন্য। গত ১৫ বছরে অসংখ্যবার রাস্তায় নেমেছেন তারা। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে এই হারিয়ে যাওয়া মানুষদের দু’-একজনের খোঁজ মিললেও বাকিদের হদিস নেই। মিলেছে আয়নাঘরের অস্তিত্বও। যেখানেআটকে রাখা হতো ভিন্ন মতের মানুষদের।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগকেই হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে গুম কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, জমা হওয়া ১৮৫০টি গুমের অভিযোগের ১৩৫০টির যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ৩৪৫ জনের হদিস পায়নি কমিশন।
বিগত সরকারের আমলে ব্যর্থ হলেও এই বাস্তবতায় প্রথমবারের মতো দেশে আসার অনুমতি পেয়েছে জাতিসংঘের গুম বিষয়ক প্রতিনিধি দল। সকালে সচিবালয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বলেন, একমাসের মধ্যে গুম বিষয়ক আইন ও দুই মাসের মধ্যে আইনের আওতায় স্থায়ী কমিশন করা হবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা গুম বিষয়ক যেই আইন করবো সেই আইনের অধীনেও খুব শক্তিশালী কমিশন গঠন করার ইচ্ছা রাখি। সেটা আমরা তাদের জানিয়েছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন আমাদের আইনের কিছু কিছু জিনিস যেমন আমাদের ভিকটিম যারা আছে তাদের সাথে আলোচনা করা দরকার। আর গুম বিষয়ক কমিশনের সাথে আলোচনা করা দরকার। আমরা তাদের বলেছি আমরা আলোচনা করবো।’
চলামন কমিশন যেখানে কাজ শেষ করবে সেখান থেকেই স্থায়ী কমিশনের কাজ শুরু করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন সময়ে যারা গুমের শিকার তাদের আইনের আওতায় নিঁখোজ সনদ দেয়া যায় কি না সেই বিষয়ে ভাবছে সরকার।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মৃত্যু সনদের অভাবে গুমের শিকার যারা তাদের পরিবার অনেক ভুগে। আপনারা তো দেখেছেন আমি ১৫ বছর তাদের সাথে সকল আন্দোলনে ছিলাম। আমি তাদের সাফারিংস বুঝি। আমরা আইনে একটা প্রতিকার দিতে পারি তা হলো মিসিং পারসন সার্টিফিকেট। সেটা আমরা বিবেচনা করছি। এই মিসিং পারসন সার্টিফিকেট যার কাছে থাকবে তার পরিবারের কেউ গুম হলে সে যেন ব্যাংকিং বিষয়ে বা উত্তরাধিকার নিয়ে প্রশ্ন এগুলো নিয়ে যেন প্রতিকার পেতে পারে।’