গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (শুক্রবার, ৪ জুলাই) দুপুরে বঞ্চিত এই শহীদের পরিবারকে দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এসময় শহীদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এমন উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংগঠনটির সভাপতি। বলেন, ‘বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রনির সব স্বীকৃতি দিতে হবে।’
ফ্যাসিবাদ উৎখাতে জুলাই আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন শহীদ রনি হোসেন। ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর ‘আল্লাহ করিম’ মসজিদের সামনে পুলিশের গুলি রনির বুক ফুটো করে বের হয়ে যায়। সেই শোক থেকে এখনো বের হতে পারিনি তার পরিবার।
শহীদ রনি হোসেনের দাদি বলেন, ‘পুলিশ আমার নাতিকে গুলি করেছে। আমরা তার কোনো খবর পাইনি। একটা ছেলে রনির ছবি নিয়ে এসে আমাদের দেখিয়ে বলেছে ওর গুলি লেগেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা গেছে।’
এক বছর পেরিয়ে গেলেও জুলাই যোদ্ধার স্বীকৃতি দূরের কথা সরকারি কোনো অনুদানও পৌঁছায়নি অটোচালক রনির জীর্ণ ঘরে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তার পরিবার।
রনির মা বলেন, ‘একজন এসে আমাকে বলেছে রনির গুলি লেগেছে। সরকার আমাকে কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। কোনো আর্থিক সাহায্য ও করেনি। আমার স্বামী নেই। আমার ছেলেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলো। এখন আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমার সংসার চলে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ বলেন, ‘এক বছর হয়ে যাওয়ার পরেও কেন রনির কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি, কেন তার পরিবারের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কেন আসার প্রয়োজন মনে করেনি; এর জবাব ইন্টেরিমকে দিতে হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, শহীদ রনির মায়ের কান্না, দাদির কান্না, বোনের কান্না আর যেন না ঝরে, সে ব্যবস্থা ইন্টেরিম জলদি করুক।’
এর আগে, শুক্রবার সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ‘জুলাই শহীদদের’ গণকবর জিয়ারত করে মাসব্যাপী কার্যক্রমের উদ্বোধন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জিয়ারত শেষে এক বছরেও বেওয়ারিশ শহীদদের লাশ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে না পারায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার তীব্র সমালোচনা করেন সংগঠনের সভাপতি রিফাত শহীদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবো। তাকে আমরা প্রশ্ন করবো, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ এই দৃশ্য দেখলে সে ব্যবস্থা নিতে চাইবে অথচ আপনারা ক্ষমতায় থেকেও কেন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বিচারপ্রক্রিয়ার নামে ‘‘ঠন ঠনা ঠন’’ চলছে। বিচারের এই গতি দেখলে কচ্ছপ ও লজ্জা পেয়ে যাবে এরকম অবস্থা। রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগ আবার পুনর্বাসিত হচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রমকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বলতে চাচ্ছি কালসাপ যতই সুন্দরভাবে সাজুক, যতই নতুনভাবে সাজুক; তার স্বভাব সে ফণা তুলবে, ছোবল দেবে।’