এরইমধ্যে আন্দোলনকারীদের হুমকি ধামকি দিতে শুরু করেছে ছাত্রলীগ ও সরকারের মন্ত্রীরা। সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, ‘ছাত্রদের দাবি তো পূরণ হয়ে গেছে। বসার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
পরিস্থিতি যখন এমন, তখন ফেসবুক পোস্টে সারাদেশের আন্দোলনকারীদের ১০টি নির্দেশনা দেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম । বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরে সবাইকে সংঘটিত হয়ে আলাদা সমন্বয়ক কমিটি গঠন, বিকল্প নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখা, মাইকিং লিফলেট এর মাধ্যমে গণসংযোগ , লাইব্রেরিতে প্রচার এবং অর্থ সংগ্রহে সরাসরি ক্রাউড ফান্ডিং এর নির্দেশনা দেন তিনি।
এ দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন থেকে ঘোষণা আসে পরদিন ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার।
হাসনাত আবদুল্লাহ ঘোষণা দেন, ‘সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন।’
১৪ জুলাই সকাল বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শুরু হয় গণপদযাত্রা। এটি টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্য ভবন পেরিয়ে শিক্ষা ভবন ও গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে পুলিশের ব্যারিকেটের বাধায় পড়ে দফায় দফায়। পরে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি'র সামরিক সচিবের স্মারকলিপি পৌঁছে দেন।
সারাদেশেও গণপদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আরও সক্রিয় করাও ছিল লক্ষ্য। নতুন গতি সঞ্চারের এক মাধ্যম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের তো একটা চিন্তা ছিলো রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার। মাহফুজ ভাই তখন বলেছিলো এটা কেন? আমি তখন বলেছিলাম রাষ্ট্রের একদম সুপ্রিম যিনি তাকেও আমরা কনসার্ন জানিয়েছি, আমাদের দাবি জানিয়েছিলাম। তারপর আমরা এগ্রেসিভ আন্দোলনে গিয়েছি। আর আমরা যদি ৬৪ জেলায় এ আন্দোলনটা বিস্তৃত করতে চাই, তাহলে আমরা যখন ডিসির মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করবো তখন এমনিতেই একটা এঙ্গেজিং প্রোগ্রাম হবে এটা। তখন মাহফুজ ভাই বললো ঠিক আছে আমরা আলাপ করছি। এরপর নিজেদের মধ্যে আলাপ করে এ সিদ্ধান্তে আসলো।’
আর এই স্মারকলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদের নির্দেশে লিখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ।
মোসাদ্দেক বলেন, ‘প্রথমে আমি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। তারপর ফরহাদ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন এটা ৪৮ ঘণ্টা না দিয়ে ৭২ ঘণ্টা দিতে। এরপর আমি ৭২ ঘণ্টা দিয়ে আপডেট করে দিলাম। এরপর আবার ফোন দিয়ে বললেন ৭২ ঘণ্টা না দিয়ে এটা ২৪ ঘণ্টা করে দাও। এই ছিলো স্মারকলিপি প্রদানের ঘটনা। ওইদিন এই খসড়া রেডি করতে করতে প্রায় রাত তিনটা বেজে যায়।’
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের নাহিদ ইসলামের সেদিনের ১০ নির্দেশনা এবং পরদিন সারাদেশে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার যে কর্মসূচি তা আন্দোলনে যোগ করে নতুন মাত্রা।