চলতি বছরের ৬ মাসে খুন ১ হাজার ৯৩০; ধর্ষণ ২ হাজার ৭৪৪

ক্রাইমের প্রতীকী ফটো
দেশে এখন
0

চলতি বছরের ছয় মাসে খুন হয়েছে ১ হাজার ৯৩০ জন। প্রতিদিন গড়ে ১১ জন। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১২ হাজার। এরমধ্যে ধর্ষণই আছে ২ হাজার ৭৪৪টি। যদিও সরকার বলছে, অন্য বছরের তুলনায় অপরাধ বাড়েনি। এতো সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনের প্রয়োগ না থাকাকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা।

গেল ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী সোহাগকে। দোকান থেকে টেনে নিয়ে হেলমেট দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করে। পরে পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়।

রোববার সিলেটের কাজির বাজারের পাশের একটি চায়ের দোকানের কর্মচারী রুমন নিহত হন। চা দিতে দেরি হওয়ায় কথা কাটাকাটি নিয়ে রুমনকে ছুড়ি মেরে হত্যা করা হয়। আর সোমবার ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই সন্তানকে গলা কেটে বাসার ভেতরে হত্যা করে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।

ঢাকা শহরে প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ। এছাড়া খালে, নদীতে, সড়কের পাশে মিলছে মানুষের মরদেহ। কিছু ঘটনায় কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড থেকে যাচ্ছে আলোচনার বাইরে। হচ্ছেও না তদন্ত, নেই মামলার অগ্রগতি।

অপরাধের তথ্য |ছবি: এখন টিভি

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সাত মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে খুন হচ্ছে ১১ জন। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারাদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৯৩০ জন।

জানুয়ারিতে ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০, মার্চে ৩১৬, জুনে সর্বোচ্চ ৩৪৩ জন। প্রতিমাসে মহামারির আকার ধারণ করছে হত্যাকাণ্ড। দেশের সব থানায় মামলার সংখ্যা থেকে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি খুন হচ্ছে ঢাকা মহানগরে। এরপরেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি খুনের ঘটনা ঘটছে।

এছাড়া, কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ করে বিবস্ত্র করার দৃশ্য তোলপাড় হয়। ছয় মাসে সারাদেশে ১১ হাজার ৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে।

অপরাধের তথ্য |ছবি: এখন টিভি

দেশে হত্যাকাণ্ড কেন বাড়ছে? নিয়ন্ত্রণ কেন করা যাচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভঙ্গুর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় হত্যাকাণ্ড বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সেখানে পরমতসহিষ্ণুতার কোনো জায়গা নেই। একে অন্যের উপর রাজনৈতিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা জায়গা তেমন একটা নেই। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে দেখা যাবে রাজনৈতিক কারণ আছে। এই অস্থিরতা কিছুটা রোধ করা যায় যখন আইনের শাসন থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে আইনের শাসনের ঘাটতি আছে প্রচণ্ড রকমের। সেখানে ন্যায়বিচার-সুবিচারের ঘাটতি আছে। আমরা তো একটা অন্তর্বর্তী অবস্থায় আছি। এই অন্তর্বর্তীর সুযোগ নিয়ে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে।’

অপরাধের তথ্য |ছবি: এখন টিভি

সমাজে হানাহানি বেড়ে যাচ্ছে, মানুষ সহিংস হয়ে উঠছে। এতো সংঘাত বাড়ছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, অপরাধকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহিত করায় মানুষ দিন দিন হিংস্র হচ্ছে।

মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহজাবিন হক বলেন, ‘যখন তারা দেখবে ভালো কাজে তারা পুরস্কৃত হচ্ছে না। বড় মন্দ কাজে মানুষের আকর্ষণ বেশি। কারণ মন্দ কাজ করলে মানুষ হুজুর হুজুর করে। তাকে ভয় পাচ্ছে। সে আরেকজনের জিনিস কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করছে না। যেকোনো অস্থিরতার সময় মানুষের যে কুচিন্তা সেগুলো বের হয় আসতে থাকে। এক্ষেত্রে মানুষের শুভ জায়গাগুলো বা গুণাবলি রয়েছে সেগুলো বের করে আনার জন্য জোর দিতে হবে।’

এদিকে বিগত বছরেও তুলনায় অপরাধ বেড়েছে এমন দাবি সঠিক নয় বলে দাবি সরকারের। সরকারের তথ্যমতে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে সরকার। সেখানে দেখা যায়, ২০২০ সালে খুন হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৯ জন আর ২৪ সালে খুন হয়েছে ৪ হাজার ১১৪ জন।

সেজু